উপজেলা চেয়ারম্যানের দিকে ‘বন্দুক তাক’ বগুড়ার সংসদ সদস্যের

হাতে পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের বারান্দায়
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রেজাউল করিম বাবলু শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের দিকে বন্দুক তাক করে তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাতে পিস্তল নিয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন সংসদ সদস্য—এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে সংসদ সদস্য রেজাউল করিমের দাবি, তিনি কাউকে হত্যার হুমকি দেননি, বরং আত্মরক্ষার জন্য তিনি পকেট থেকে বন্দুকটি বের করেছিলেন। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের বারান্দায় পুলিশের উপস্থিতিতেই এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা চলছিল।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবের নিরাপত্তা বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ডাকা হয়। সংসদ সদস্য রেজাউল করিম এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব হোসেন, দুজনই এই কমিটির উপদেষ্টা। কমিটির সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদের আমন্ত্রণে সভায় যোগ দিতে আজ সকাল ১০টার দিকে পরিষদে যান সংসদ সদস্য।

নিজের আত্মরক্ষার জন্য পকেট থেকে লাইসেন্স করা বন্দুক বের করেছি। তবে বন্দুক উঁচিয়ে কাউকে মেরে ফেলার হুমকি দিইনি।
সংসদ সদস্য রেজাউল করিম

দুজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আজ সকালে রেজাউল করিম তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ও শ্যালক রেজাউল করিম ওরফে রেজা, গাড়িচালক শামিম, অফিস সহকারী সামিউলসহ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ইউএনওর কক্ষে যান। এ সময় ইউএনও সভায় ছিলেন। ইউএনওকে না পেয়ে সঙ্গীদের নিয়ে সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁকে দেখেই তেড়ে আসেন উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বাদশা। প্রকল্প দেওয়ার কথা বলে সংসদ সদস্য টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করেন আলমগীর। একপর্যায়ে সংসদ সদস্যের শ্যালক ও ব্যক্তিগত সহকারী রেজা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সেখানে গিয়ে যুবলীগ নেতাদের পক্ষ নিলে সংসদ সদস্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম পকেট থেকে বন্দুক বের করেন। যুবলীগ নেতাদের দাবি, রেজাউল করিম বন্দুক বের করে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ যুবলীগ নেতাদের ভয় দেখান।

আরও পড়ুন

সোহরাব হোসেনের অভিযোগ, আলমগীর বাদশার কাছে ঘুষ নিয়েও টিআর-কাবিখা প্রকল্প দিতে টালবাহানা করছেন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম। টাকা ফেরত চাওয়ায় রেজাউল করিমের শ্যালক আলমগীর বাদশার ওপর হামলা করেন। তাঁকে রক্ষা করতে গেলে রেজাউল করিম পকেট থেকে বন্দুক তাক করে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তাঁর দাবি, ‘দুই পক্ষের মারামারির মধ্যস্থতা করতে গেলে সংসদ সদস্য হঠাৎ পকেট থেকে বন্দুক বের করেন। আমার পায়ের দিকে বন্দুক তাক করে প্রকাশ্যে মেরে ফেরার হুমকি দেন।’

উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বাদশার দাবি, তিনি উপজেলার সাজাপুর ঈদগাহ মাঠ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ঈদগাহ মাঠের উন্নয়নের জন্য তিনি ২০১৯ সালে সংসদ সদস্যকে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এই টাকার বিনিময়ে প্রতি অর্থবছরে প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার কথা ছিল সংসদ সদস্যের। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তিনি তিন লাখ টাকার প্রকল্প দিয়েছেন। বাকি ৯৫ হাজার টাকা দিতে টালবাহানা করে আসছিলেন। আজ সকালে উপজেলা পরিষদে হঠাৎ সংসদ সদস্যের দেখা পেয়ে তিনি টাকা ফেরত চান। তখন তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

তবে সংসদ সদস্য রেজাউল করিমের দাবি, ‘আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগ দিতে গেলে যুবলীগ নেতারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় নিজের আত্মরক্ষার জন্য পকেট থেকে লাইসেন্স করা বন্দুক বের করেছি। তবে বন্দুক উঁচিয়ে কাউকে মেরে ফেলার হুমকি দিইনি।’

সাংসদ রেজাউল করিম
ছবি: সংগৃহীত

প্রকল্প দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পিএ রেজা আমার শ্যালক। রেজা কারও কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে থাকলে তিনি আমার কাছে অভিযোগ করতে পারতেন। সংসদ সদস্যের ওপর হামলা করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে। সভায় যেন যোগ দিতে না পারি, এ কারণে আমার ওপর হামলা হয়েছে। কারণ, আমি সভায় থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে, তাঁর খবরদারি কমে যাবে।’

উপজেলা পরিষদে উত্তেজনার পর শাজাহানপুর থানা–পুলিশের পাহারায় সংসদ সদস্য রেজাউল করিম উপজেলা পরিষদ ছেড়ে যান।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বন্দুক তাক করে হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই সভায় পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রউফ  ছিলেন। সেখানে কী ঘটেছে, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

যোগাযোগ করা হলে আবদুর রউফ বলেন, ‘আমি সভায় ছিলাম। বাইরে কী হয়েছে, জানি না। ওসি স্যার নিজে এসে এমপি মহোদয়কে সঙ্গে করে থানায় নিয়ে গেছেন।’

এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বন্দুক তাক করে হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলামসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।