চাচা–ভাতিজার মনোনয়নদৌড়ে শেষ হাসি আবুল খায়ের আবদুল্লাহর

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, এটা নিয়ে কয়েক দিন ধরে ব্যাপক জল্পনা চলছিল। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন বরিশালের নেতা–কর্মীরা। যার অবসান হয়েছে। আজ শনিবার দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে জানানো হয়েছে, বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।

বরিশালে মেয়র পদে এবারও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করে কেন্দ্রে নাম পাঠিয়েছিল মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। সাদিক আবদুল্লাহ নগর আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর বরিশাল নগরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্র ছিল চাচা-ভাতিজার মনোনয়নের লড়াই

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা। তিনি আওয়ামী যুবলীগের সদস্য।

আরও পড়ুন

মনোনয়ন ঘোষণার পর প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। উন্নত আধুনিক নগর গড়তে চাই। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও আবুল খায়ের আবদুল্লাহ এর আগে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে অনেক দিন ধরেই নগরে গুঞ্জন ছিল। তিনি বিষয়টি আগেভাগে খোলাসা করেননি। নানা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ, বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এমনকি প্রতি মাসেই একটা বড় সময় বরিশালে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বরিশালসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর তিনি আরও বেশি তৎপর হন। সম্প্রতি তাঁর মা আমেনা বেগমের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচির বাইরে তিনি পৃথকভাবে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তাঁর ভাড়া বাসায়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা গুঞ্জন অনেকটা প্রকাশ্যে আসে।

সাদিক আবদুল্লাহ ও আবুল খায়ের আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি কখনো রাজনীতিতে সক্রিয় হইনি। তবে রাজনীতি আমার রক্তে প্রবহমান। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি বিশ্বাস করি, এই শহরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এটাকে ইতিবাচক হিসেবে নেবে এবং আমাকে সমর্থন দেবে।’

আরও পড়ুন

এত বছর পরে কেন রাজনীতিতে আসতে চাইলেন—এই প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাবা একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন। আমার মামা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা কাছ থেকে দেখেছি, সংস্পর্শ পেয়েছি। ফলে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম না, এটা সঠিক নয়। এখন সক্রিয় হতে চাইছি এ জন্য যে বরিশাল নগরের মানুষের যে উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা, যে স্বপ্ন, যে সেবা পাওয়ার কথা ছিল, তা তাঁরা পাননি।’

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মনে করেন, ‘একটি এলাকার উন্নয়নে মূল ভূমিকা রাখেন রাজনীতিবিদেরা। সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ব্যর্থ হয়, তখন তা থমকে পড়ে। বরিশালের মানুষের যা প্রয়োজন, এখন তা পাচ্ছেন বলে আমার মনে হয় না।’

আরও পড়ুন

বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাদিক আবদল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ তালুকদার মো. ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নের ব্যাপারে আমরা এখনো দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক বার্তা পাইনি।’ আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মনোনয়ন পেলে অবস্থান কী হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। আমাদের প্রিয় নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা মেনে নেওয়াই হলো প্রত্যেক নেতা-কর্মীর প্রধান দায়িত্ব। অবশ্যই নেত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’

আরও পড়ুন