গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচন (পুনর্ঘোষিত) আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই নির্বাচনের প্রচার কাজ শেষ করেছেন প্রার্থীরা। এখন কেবল ভোটগ্রহণের অপেক্ষা। উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচজন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির (জাপা) গোলাম শহীদ, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
নির্বাচন ঘিরে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় ভোটের আলোচনা এখন তুঙ্গে। কে জিততে পারেন, কে হারতে পারেন এসব আলোচনার পাশাপাশি প্রার্থীদের কাছে নিজেদের প্রত্যাশার বিষয়েও আলোচনা করছেন ভোটাররা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তেমন কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর এ প্রতিবেদক।
আজ সকালে ফুলছড়ি উপজেলার সমিতির বাজার গ্রামে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম (৫৫) বলেন, গত ১৫ বছরে কোনো জনপ্রতিনিধি এলাকাবাসীর কোনো দাবি বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করেননি। সে জন্য সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তিনি ভোট দেবেন। তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধার সবচেয়ে অবহেলিত দুই উপজেলা হলো ফুলছড়ি ও সাঘাটা। দুটি উপজেলাই নদীভাঙন কবলিত। দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্য সাতটি ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে। এখানকার প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। ভাঙনের কারণে উপজেলা দুটির দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন হয়নি। দুই উপজেলার উন্নয়নে ফুলছড়ির বালাসি থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত সেতু নির্মাণ দরকার। তাই আগামীকাল বুধবারের উপনির্বাচনে আমরা তাঁকেই ভোট দেব, যিনি এই দাবি পূরণের নিশ্চয়তা দেবেন।’
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দুরে ফুলছড়ির কালিরবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চায়ের দোকানে বসে ভোট, প্রার্থী, ইভিএম নিয়ে আলোচনা করছেন সবাই। সেখানে জলিল মিয়া (৫০) নামের একজন রিকশাচালক বলেন, ‘গতোব্যার ম্যালা আশা করি মেসিনোত ভোট দিচি। দুপুরবেলা শুনি ভোট বনদো হচে। এব্যারক্যা যানি ভালবাবে ভোট হয়া যায়। ভোট যানি বনদো না হয়।’
একই গ্রামের ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া (৪০) বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। উপনির্বাচনের মাধ্যমে একটা পরিবর্তন আসা উচিত। এ সময় একই গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম (৪২) বলেন, এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। উপনির্বাচনে বিরোধী দলে ভোট দিলে উন্নয়ন হবে না।
কালিরবাজার থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সাঘাটা উপজেলার ভন্নতের বাজার এলাকার একটি চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও নির্বাচনী আলোচনা চলছে। চা–পান করতে করতে উল্লাসোনাতলা এলাকার চাকরিজীবী মুকুল মিয়া বলেন, এ উপনির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান সম্প্রতি ভোটের পরিবেশ নেই অভিযোগ করে উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে সরে দাঁড়ানোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকা দরকার।
ভন্নতের বাজার এলাকার ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বলেন, উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুজনকে শুধু ভোটের সময় দেখা যায়। তাঁরা অতিথি পাখি। তিনি বলেন, ‘যারা দীর্ঘসময় ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন, তাঁদেরই ভোট দেব।’
ভোটারদের এসব প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে থাকার সুবাদে দুই উপজেলার তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে আমার যথেষ্ট প্রভাব আছে। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছি। ভাঙনের কারণে গাইবান্ধার বালাসি থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। এখানে নদের তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ হতে পারে। আমি নির্বাচিত হলে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা ও টানেল নির্মাণে পদক্ষেপ নেব।’
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী গোলাম শহীদ বলেন, ‘এ প্রতীক প্রয়াত এরশাদের। উপনির্বাচনে ভোটাররা এই প্রতীককে বিজয়ী করবেন বলে আমি আশাবাদী। আমি নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর দাবি বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেব।’
এই আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত বছরের ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ আসনে ইভিএমে ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। প্রতিটি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। এখানে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন।