জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
দুই শিক্ষককে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিয়ে বসানো হলো ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদককে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ছয়টি হল ও ওয়াজেদ মিয়া গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষকেরা বসে ছিলেন সামনের সারির চেয়ারে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান (সোহেল) ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান (লিটন) সেখানে আসেন। তাঁদের সামনের দিকের সারিতে বসাতে দুই শিক্ষককে তাঁদের চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি স্থাপনার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠান শুরুর ২৪ মিনিট পর প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মী নিয়ে মিলনায়তনে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর। ততক্ষণে মিলনায়তন অতিথি এসে ভরে যায়। পরিপূর্ণ হলরুমে জায়গা না পাওয়ায় দুই নেতাকে সামনের দিকের সারিতে জায়গা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিলনায়তনে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও দর্শন বিভাগের দুজন প্রভাষককে তৃতীয় সারির চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুরকে বসার জায়গা করে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান নিজেই বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আসেন। তখন সামনের দিকে জায়গা ছিল না। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা দাবি করেছিল, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম, প্রধানমন্ত্রী যদি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলতে চান। তাই তাঁদের যেন স্ক্রিনে দেখা যায় এমন জায়গায় বসার ব্যবস্থা করার জন্য। তখন সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমার খুবই কাছের দুজন শিক্ষককে অনুরোধ করে অন্য জায়গায় বসানোর ব্যবস্থা করি। আর ওই তৃতীয় সারিতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বসতে দিই।’
ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান অবশ্য ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সামনের দিকে তৃতীয় সারিতে জায়গা পেয়ে বসেছিলাম। ওখানে শিক্ষক বসা ছিল নাকি শিক্ষার্থী বসা ছিল, সেটা তো আমরা জানি না।’
ছাত্রলীগ শিক্ষকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা অশোভন ও লজ্জাকর বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন শিক্ষককে তাঁর আসন থেকে তুলে সেখানে ছাত্রলীগের কর্মীকে বসানো অত্যন্ত ঘৃণ্য আচরণ বলে মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ নতুন নয়। এর আগে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও তারা এ ধরনের আচরণ করেছে। সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রলীগ লাগামছাড়া আচরণ করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। কদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা হস্তক্ষেপ করেছে। ছাত্রলীগের এই আচরণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের ছাত্র শৃঙ্খলা বিধির আওতায় এনে কোনো শাস্তি দিতে পারছে না।