চিকিৎসক ও খাবার নিয়ে সেই বৃদ্ধের পাশে প্রশাসন

দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের হাবিবপুর বাজারে অসহায় বৃদ্ধ আবদুল ওয়াহেদকে (৭০) দেখতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম ও পৌর মেয়র আককাস আলী
ছবি: প্রথম আলো

৭০ বছর বয়সী আবদুল ওয়াহেদ পুরোনো নড়বড়ে কাঠের চৌকিতে ঘুমান। পলিথিনের বস্তার তৈরি পাতলা বিছানা। মাথার নিচে নোংরা একটি বালিশ। মাথার পাশে পানির পুরোনো বোতল, দুটি প্লাস্টিকের মগ, খাবারের শূন্য প্লেট ও লাঠি। জীবনসায়াহ্নে এখন এসবই তাঁর সহায়-সম্বল। দিনাজপুরের বিরামপুরে নতুন তৈরি খোলা দোকানঘরে শুয়ে থাকা সেই অসহায় আবদুল ওয়াহেদের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আজ বুধবার বেলা একটার দিকে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও দুজন চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে আবদুল ওয়াহেদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে আবদুল ওয়াহেদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। ১৪ আগস্ট প্রথম আলো অনলাইনে ‘কেমন আছেন, জিজ্ঞাসা করতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন বৃদ্ধ ওয়াহেদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বৃদ্ধ ওয়াহেদকে দেখতে আসেন ইউএনও নুজহাত তাসনীম।

আরও পড়ুন

বৃদ্ধ ওয়াহেদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ইউএনও স্থানীয় বাসিন্দা ও তাঁর দূরসম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। আবদুল ওয়াহেদকে সরকারি কোনো বৃদ্ধাশ্রমে রাখা যায় কি না, এ ব্যাপারেও তাঁদের মতামত নেন। পরে ওয়াহেদের হাতে শুকনা খাবার, ফলমূল ও নগদ অর্থসহায়তা তুলে দেন ইউএনও ও পৌর মেয়র। এ ছাড়া শোবার জন্য নতুন বিছানা, চাদর ও তোশক দেওয়া হয়েছে।

এ সময় ইউএনওর সঙ্গে আসা বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক গোলাম মাহমুদুর রহমান ও উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান আবদুল ওয়াহেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক গোলাম মাহমুদুর রহমান তাঁর জন্য প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধপথ্য দেন।

গোলাম মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃদ্ধ আবদুল ওয়াহেদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তিনি অনিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও পেটের পীড়ায় ভুগছেন। তাঁকে প্রাথমিক কিছু ওষুধপথ্য দেওয়া হয়েছে। তাঁর আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি যেসব শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, নিয়মিত চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

আবদুল ওয়াহেদের বাড়ি বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের ভেলারপাড় গ্রামে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আপনজন কেউ তাঁর পাশে নেই। তাঁর নিজের থাকার ঘরও নেই। একমাত্র ছোট ভাই পীর মোহাম্মদ দুই যুগ আগে নিজ এলাকা ছেড়ে পাশের ইউনিয়নের বিনাইল গ্রামে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনিও বড় ভাইয়ের তেমন খোঁজখবর রাখেন না বলে জানালেন স্থানীয় লোকজন। মাসখানেক আগে আবদুল ওয়াহেদ বাজারের বিভিন্ন দোকানের বারান্দায় অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে থাকতেন। সেখানকার স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাঁকে এই জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওই যুবকেরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি ও দোকান থেকে খাবার এনে তাঁকে খেতে দেন। আবদুল ওয়াহেদ দেড় বছর আগে প্যারালাইজড হয়ে যান। চিকিৎসার পর এখন লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারলেও স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না।

ইউএনও নুজহাত তাসনীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুরে পৌর মেয়র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে হাবিবপুর বাজারে গিয়ে আবদুল ওয়াহেদের সঙ্গে দেখা করেছি। এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাঁকে কিছু নগদ অর্থসহায়তা, খাবার ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁকে দিনাজপুর শহরে একটি সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, অসহায় আবদুল ওয়াহেদকে দিনাজপুর রাজবাড়িতে অবস্থিত শিশু পরিবারের আওতায় বৃদ্ধাশ্রম ‘শান্তিনিবাসে’ রাখার বিষয়ে ইউএনও খোঁজখবর নিতে বলেছেন। মুঠোফোনে দিনাজপুরে কথা বলেছেন। সেখানে একটি আসন ফাঁকা আছে। কাল (বৃহস্পতিবার) যোগাযোগ করে আবদুল ওয়াহেদের জন্য আসন চেয়ে আবেদন করা হবে।