সাতক্ষীরায় সুন্দরবনের চরে রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই অসুস্থ, ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি

সুন্দরবনের চরে বিএসএফের রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকেছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার শ্যামনগরসংলগ্ন পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) রেখে যাওয়া ৭৫ ব্যক্তির অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে আটজনকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মশিউর রহমান জানান, গত ২৬ এপ্রিল ভারতের পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের একটি বস্তি থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আটক করে। পরে তাঁদের একটি পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে দলভিত্তিক ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ৭৮ জনকে চোখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়। ৯ মে ভোর চারটার দিকে সুন্দরবনের গহিন এলাকায় তাঁদের ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। পরে সকাল ৯টার দিকে তাঁরা বন বিভাগের সহায়তায় সাতক্ষীরার মান্দারবাড়ি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এরপর গত শনিবার রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের কাকা-দোবেকী ক্যাম্পের কনটিনজেন্ট কমান্ডার আতিকুর রহমানের কাছে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে তাঁদের মোংলা কোস্টগার্ড অফিসে নেওয়া হয়। পরে গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের একটি বাসে তাঁদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় পৌঁছানো হয়।

৭৮ জনের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় নাগরিক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

৭৮ জনের ১ জন লিটন মিয়ার ভাগ্নে নাজমুল হোসেন জানান, রোববার রাতে পুলিশ তাঁদের স্বজনদের থানায় আসার জন্য আহ্বান জানায়। তাঁরা গতকাল সোমবার সকালেই শ্যামনগর থানায় পৌঁছান। তবে হস্তান্তরের কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, বেলা তিনটায় সংবাদ সম্মেলনের পর তাঁদের হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা পৌঁছান রাত ১১টার পর, এ কারণে হস্তান্তর সম্ভব হয়নি।

আবু হিলালের খালু মিজানুর রহমান বলেন, বিএসএফের নির্যাতনে অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ। গতকাল সকাল থেকে হস্তান্তরের আশায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এটা আরেক ধরনের নির্যাতন। অনিক শেখ ও আবু বক্কর নামের দুজন বলেন, বিএসএফের লাঠিপেটায় অনেকের পিঠ ও নিতম্বের চামড়া উঠে গেছে। অসুস্থ মানুষগুলোকে তীব্র গরমে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, কোস্টগার্ড মংলা পশ্চিম জোনের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ের পর হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা গতকাল রাত ১১টার পর পৌঁছালে ব্রিফিং করা সম্ভব হয়নি। আজ মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিং করে তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অসুস্থ হয়ে পড়া ১০ জনের মধ্যে ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি এবং ২ জনকে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬৫ জনকে শ্যামনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন