থানায় যুবককে পেটানো সেই স্বর্ণ পাচারকারী চলে গেছেন দুবাই

দুবাই পৌঁছানোর পর ফেসবুকে সুলতান মিয়ার (ডানে) দেওয়া পোস্ট
ছবি: সংগৃহীত

দুবাই থেকে অবৈধভাবে আনা সোনা উদ্ধারে পুলিশকে দিয়ে যুবককে পেটানো সুলতান মিয়া সোনা পাচারের মামলায় জামিন পেয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দুবাই পাড়ি দিয়েছেন। সুলতান মিয়ার স্বজনেরা তাঁর দুবাই চলে যাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

সুলতানের বিদেশ চলে যাওয়ার তথ্য পেয়ে তাঁর বড় ভাই ফারুক মিয়ার সঙ্গে গতকাল সোমবার রাতে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের কাশেমনগর গ্রামে। ফারুকও দুবাইয়ে থাকতেন। কয়েক মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। তিনি বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য।

ফারুক বলেন, ‘আপনারা যেদিন (২৬ মার্চ এ প্রতিবেদকসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী সুলতানের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে তাঁদের বাড়িতে যান) এসেছিলেন, সেদিন রাতেই সুলতান দুবাই চলে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার কিছু মানুষে ষড়যন্ত্র করি আমার ভাইরে (সুলতান) জেলে ঢোকাইছিল। নির্দোষ হওয়ায় ছাড়া পাইছে।’

স্বর্ণ পাচারের মামলা ও জামিন আদেশের কপি আছে কি না জানতে চাইলে ফারুক মিয়া বলেন, ‘সব আমার এক ভাগনের কাছে আছে, দেখাব।’ হোয়াটসঅ্যাপে কপিগুলো পাঠানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে চেষ্টা করবেন বলে জানান। তবে আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি কারও কাছে পাঠাননি।
সুলতান ‘সুলতান হিরণ’ নামের ফেসবুক আইডি চালান। তাঁর জুড়ীর এক ফেসবুক বন্ধুর আইডিতে দেখা গেছে, দুবাই পৌঁছে সুলতান পরদিন ২৭ মার্চ একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির ওপরে ‘আলহামদুলিল্লাহ অ্যাগেইন কামব্যাক দুবাই’ লেখা। ছবিতে তাঁর পাশে আরেক ব্যক্তি বসা।

সুলতানের ওই ফেসবুক বন্ধুর কাছ থেকে দুবাইয়ে ব্যবহৃত তাঁর (সুলতান) হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সংগ্রহ করে কথা হয়। প্রথমে অপর প্রান্ত থেকে এ প্রতিবেদকের পরিচয় জানা হয়। এরপর অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে সাগর ও সুলতানের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘সুলতান (দুবাই) ফিরেছেন। তবে ব্যবসার কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত। সুলতান সেখানে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন।’

সুলতানের বিরুদ্ধে তরুণকে পেটানো ও  তাঁর বিরুদ্ধে সোনা পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অনেক টাকার সোনা খুইয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ উত্তেজিত থাকতে পারে। এটাতে কি কেউ অপরাধী হয়ে যায়। সোনার মামলার বিষয়ে তাঁর (সুলতান) সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয় নাই। দেখা হলে আপনাকে (প্রতিবেদক) ফোন দিতে বলব।’

হোয়াটসঅ্যাপের নম্বরে ওই ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে সুলতানের জুড়ীর ফেসবুক বন্ধু তিনি (ওই ব্যক্তি) সুলতান বলে নিশ্চিত করেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পাওয়ায় তিনি (সুলতান) নাম গোপন রাখতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।

সোনা উদ্ধারের ঘটনা প্রসঙ্গে সুলতানের ভাই ফারুক মিয়া আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সুলতান দুবাই থেকে তাঁর স্ত্রী এবং এক ভাগনের বিয়ের জন্য মানিকগঞ্জের এক ব্যক্তির মাধ্যমে (নাজমুল) সোনা পাঠান। ওই ব্যক্তিকে একটি টিকিট ও সোনার ট্যাক্স বাবদ ৪০ হাজার টাকাও দেন। ওই ব্যক্তি যেদিন দেশে আসেন, ওই দিন তাঁরা (ফারুক) বিমানবন্দরে সোনা আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নাজমুল সোনা পৌঁছে না দিয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে রাখেন।

আরও পড়ুন

ফারুক মিয়া আরও বলেন, এ ঘটনার পাঁচ-ছয় দিন পর সুলতান মিয়া ১০-১২ দিনের জন্য দেশে আসেন। দেশে আসার পর এলাকার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের কাছে তাঁরা তিন-চারজন গিয়ে দেখা করে সোনা উদ্ধার করিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। মন্ত্রী মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশকে বলে দেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৬ লাখ টাকার সোনার মধ্যে ১৫ লাখ টাকার সোনা জব্দ করে।

গত বছরের ডিসেম্বরে স্বর্ণ পাচারের অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় ঢাকার বিমানবন্দর থানা-পুলিশ সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছিল। দুই সপ্তাহ আগে সেই মামলায় তিনি জামিন পান। জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরে তিনি কয়েক দিন আত্মগোপনে ছিলেন।

ফারুকের দাবি, তাঁর ভাই সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত নন। সুলতান দুবাইয়ে মালিকদের কাছ থেকে বাড়ি ইজারা নিয়ে অন্য ব্যক্তিদের কাছে ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করেন। ১৫ বছর ধরে তিনি দুবাই থাকেন।

সুলতানের দুবাইয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

গত বছরের আগস্টে পুলিশকে দিয়ে নাজমুল হাসান নামের এক যুবককে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানায় তুলে আনেন সুলতান। সেটার ভিডিও সম্প্রতি প্রথম আলোর কাছে আসে। তাতে দেখা যায়, সাটুরিয়া থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) চেয়ারে বসে সোনা পাচারকারী হিসেবে পরিচিত সুলতান মিয়া জেরা করছেন নাজমুল হাসানকে। একপর্যায়ে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ওই যুবককে মারধর করেন। পরে চেয়ার থেকে উঠে সুলতানও পেটাতে থাকেন। এ ঘটনায় সাটুরিয়া থানার পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মহব্বত আলীকে বদলি এবং এএসআই তারিক আজিজকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এ ঘটনার পর গত বছরের ডিসেম্বরে স্বর্ণ পাচারের অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় ঢাকার বিমানবন্দর থানা-পুলিশ সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছিল। দুই সপ্তাহ আগে সেই মামলায় তিনি জামিন পান। জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরে তিনি কয়েক দিন আত্মগোপনে ছিলেন।