তারাকান্দার সেই বৃদ্ধার বাড়িতে নির্বাচন কর্মকর্তা, সংশোধন হচ্ছে বয়স

আমেনা খাতুন
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার দর্জিগাতী গ্রামের আমেনা খাতুন গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি। পরিবারের দাবি, তাঁর বয়স প্রায় ১১৯ বছর। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স মাত্র ৩৩ বছর। অভাব-অনটনে ভুগলেও তিনি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না। কারণ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৬৫ বছরের আগে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই।

জাতীয় পরিচয়পত্রে এই ভুলের কারণে আমেনা খাতুনের ভোগান্তি নিয়ে প্রথম আলোয় ‘গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ তিনি, এনআইডিতে বয়স ৩৩’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এই সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল শুক্রবার রাতে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা যান আমেনা খাতুনের বাড়িতে। পরে সেখানে বসেই আমেনা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের একাধিক কর্মী ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

তারাকান্দা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ কে এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘আমেনা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসালের ভুলের বিষয়টি সম্প্রতি আমাদের নজরে এসেছিল। গতকাল প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাতেই আমেনা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের কাজ করেছি। রাত ১১টার দিকে কাজ শেষ করে আমরা ফিরেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবারের মধ্যে তিনি সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।’

আমেনা খাতুন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার দর্জিগাতী গ্রামের প্রয়াত ছমেদ আলীর স্ত্রী। অভাব-অনটনের সংসারে আমেনা খাতুন থাকেন নাতির সঙ্গে। ছমেদ আলী মারা যান ৩৫ বছর আগে। আমেনা খাতুনের প্রথম সাত সন্তানের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। বড় ছেলে মো. ইয়াকুব আলীর বয়স ৮৬ বছর।

গত বৃহস্পতিবার পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র পান আমেনা খাতুন। তাঁর জন্ম ১৯০২ সালে হলেও পরিচয়পত্রে লেখা রয়েছে ১৯৮৯ সাল। শুরুর দিকে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে তেমন গুরুত্ব দেননি। আমেনার পাঁচ ছেলের মধ্যে ছোট দুই ছেলে আবদুল মান্নান ও আবদুল হাই সম্প্রতি মারা গেছেন। এর পর থেকে তাঁদের সংসারে অভাব দেখা দেয়। আমেনার এক নাতনির ছেলে রাকিবুল হাসান পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ সংশোধনের উদ্যোগ নেন। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য গালাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে যাওয়া-আসা করছেন। তবে এখনো বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।

এর আগে আমেনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, পরিবারের সবাই তাঁকে অনেক আদর করে। তবে তাঁর নাতি আর ছেলের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তাঁর নিজের থাকার কোনো ঘর নেই। নাতির ঘরের এক পাশে তিনি থাকেন। সরকারি ভাতা পেলে তাঁর নাতি আর ছেলের থেকে কিছুটা চাপ কমত।