চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে চার যুবকের মুহুর্মুহু গুলি

চট্টগ্রাম নগরে ছাত্রদল নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে যুবকেরাছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রামে চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করায় ছাত্রদলের এক নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে ১৫ থেকে ২০টি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতা আহমেদ রেজা নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। বর্তমানে তিনি যুবদলের পদপ্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

গত রোববার রাত ১০টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুছড়া উত্তর কুলগাঁও এলাকায় ফরিদ মেম্বারের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, চারজন যুবক অস্ত্র উঁচিয়ে একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক গুলি ছোড়েন। ১৫ থেকে ২০টি গুলি করার পর তাঁরা দ্রুত সরে যান।

ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো আটক করা যায়নি। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর সহযোগীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আহমেদ রেজার প্রয়াত বাবা ফরিদ উদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, বালুছড়া উত্তর কুলগাঁও এলাকার একটি খালি জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছিল। কাজটি মো. জনি নামের এক ঠিকাদারকে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ১০ থেকে ১১ জন যুবক এসে বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর নাম ব্যবহার করে ঠিকাদার জনির কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।

এ সময় জনি তাঁর পূর্বপরিচিত যুবদল নেতা আহমেদ রেজাকে বিষয়টি জানান। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবকদের কাছে টাকা চাওয়ার কারণ জানতে চান। তখন তাঁরা ‘চা-নাশতার টাকা’ দাবি করেন। বাবু তাঁদের দুই হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে ঠিকাদার তিন হাজার টাকা দিতে চান। তবে যুবকেরা সেই টাকা না নিয়েই চলে যান।

এর পর থেকে আহমেদ রেজা বিদেশি দুটি নম্বর থেকে একাধিকবার হুমকি পান বলে স্থানীয়রা জানান। এরই জেরে রোববার রাতে চার যুবক এসে তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালান।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আহমেদ রেজা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চার যুবক এসে পরপর গুলি ছুড়ে দ্রুত চলে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করে।

আরও পড়ুন

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীমউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

এদিকে বিএনপি নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষকে ভীত করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই পরিস্থিতিতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গুরুতর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একজন সাবেক নেতার বাড়িতে গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পরিবারটি চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে।’

আরও পড়ুন

উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগকালে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনি ও আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হন। এক মাসের বেশি সময় পার হলেও ওই ঘটনার শুটারদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও প্রধান আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।