নেত্রকোনায় সাবেক চেয়ারম্যান হত্যার প্রতিবাদে আ.লীগের বিক্ষোভ

নেত্রকোনা পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা সুব্রত সাংমা (৪৭) হত্যার প্রতিবাদে ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্ববিরোধের জেরে ও সীমান্তে অবৈধ ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কুল্লাগড়ার রাশিমনি বাজারে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল ও তাঁর ভাই মো. শামীম মিয়ার নেতৃত্বে সুব্রত সাংমার ওপর হামলা চালানো হয়। পরে আহত অবস্থায় সুব্রত সাংমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ অক্টোবর তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন

এ ঘটনার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে গতকাল রাত পৌনে আটটার দিকে শহরের ছোটবাজার এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়কগুলো ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অর্পিতা খানমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ভজন সরকার, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক টিটু দত্ত রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক চপল দত্ত, জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি পবিত্র সরকার, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুজ্জামান আকন্দ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, নির্বাচনী বিরোধের জের ও সীমান্তে অবৈধ ব্যবসায় বাধা দেওয়ার কারণেই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা আবদুল আওয়ালের নেতৃত্বে নৃশংসভাবে সুব্রত সাংমাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনের সময় আবদুল আওয়ালের লোকজন সুব্রত সাংমার ওপর হামলা করেছিলেন। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবদুল আওয়ালসহ সুব্রত সাংমা হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

আরও পড়ুন

সুব্রত সাংমা কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের মৃত সুধীর মানকিনের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সুব্রত সাংমার ওপর দুই দফা হামলা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।

এ ঘটনার পরদিন সুব্রত সাংমার বোন কেয়া সাংমা বাদী হয়ে থানায় ইউপি চেয়ারম্যান, তাঁর ভাই শামীম, মো. বদিউজ্জামান, সহযোগী খোকন মিয়া, ফরহাদ মিয়া, সোহেল মিয়া, হাকিম মিয়া, হুমায়ুন মিয়া, হৃদয় মিয়া, বিল্লাল হোসেনসহ ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে গত সোমবার রাতে চেয়ারম্যান আবদুল আওয়ালকে বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গত বুধবার বিকেলে শামীম মিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মামলার অন্য আসামিদের পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাকড়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল, তাঁর ভাই শামীম মিয়া ও মো. বদিউজ্জামান এই তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় খুন, মাদক, অস্ত্র, নাশকতা ও সীমান্তে চোরাচালানসহ ৪৭টি মামলা রয়েছে। দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সুব্রত সাংমা হত্যা মামলায় মূল দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।