টিনের চালা ও বেড়া দেওয়া বসতঘর। ঘরের ভেতরে ছোট দুটি কক্ষে দুটি খাট। খাটের বালিশ, লেপ-তোশক পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিচে রাখা কয়েক জোড়া স্যান্ডেল। টেবিলের ওপর খাতা-বই ভরা দুটি স্কুলব্যাগ। একটি কক্ষের পাশে রান্না করার জায়গা। সেখানে রান্নার বিভিন্ন সরঞ্জাম। বাড়িটিতে কোনো মানুষ নেই।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামের ওই বাড়িতে আজ মঙ্গলবার সকালে ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই পরিবারের একটি শিশু।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন ফয়জুর রহমান, তাঁর স্ত্রী শিরি বেগম, তাঁদের দুই মেয়ে সামিয়া বেগম (১৫) ও সাবিনা আক্তার (৯) এবং ছেলে সায়েম উদ্দিন (৭)। ফয়জুরের আরেক মেয়ে সোনিয়া বেগম (১২) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফয়জুর রহমান দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। তাঁর কোনো জমি ও বসতভিটা ছিল না। একসময় তিনি পার্শ্ববর্তী পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের টালিয়াউরা গ্রামে থাকতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামে রহমত আলীর পতিত জমিতে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। ওই ঘরের ওপর দিয়ে আগে থেকেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ১১ হাজার ভোল্টের লাইন টানানো ছিল। আজ ভোরে বজ্রপাতসহ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। তখন পাশের খুঁটি থেকে একটি তার ছিঁড়ে ফয়জুরের ঘরের ওপর পড়ে। এতে টিনের চালের ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই পরিবারের পাঁচ সদস্য মারা যান।
পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়ি মসজিদ থাকি বাইর অইয়া দেখি, কারেন্টের তার ছুটিয়া আগুন জ্বলে। ফয়জুরের ঘরের চালেও আগুন। কয়েকজনে মিলি শুকনা কাঠ দিয়া পয়লা বেড়া ভঙি। দেখি খাটে মানুষ নাই। এর মাঝে কারেন্টের লাইন অফ অয়। পরে দরজা ভাঙি দেখলাম, পাঁচজনর লাশ পড়ি রইছে। একজনর লাশ আরেকজনর উপরে পড়ি রইছে। মনে অয়, তারা দরজা খুলিয়া বাইর অওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু, দরজা স্টিলর থাকায় সবাইরে কারেন্টে ধরি লাইছে। ঘরের আরেক রুমে ফয়জুরের এক মেয়েরে পাই। তার শরীরের বেশ কিছু জায়গা পুড়ি গেছে। বাঁচিয়া আছে দেখিয়া হাসপাতালে পাঠাই। এরপর ফায়ার সার্ভিস আর থানার পুলিশ আয়।’
পল্লী বিদ্যুতের বড়লেখা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল হুদা জানান, বজ্রপাত ও ঝড়বৃষ্টিতে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইনের একটি খুঁটির ওপর ‘ইনসুলেটর’ (তার আটকানোর যন্ত্র) ভেঙে তার ছিঁড়ে আগুন ধরে যায়। ওই লাইনের নিচেই ফয়জুর রহমানের টিনের ঘর। এতে ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েছিল। খবর পাওয়ার পর তাঁদের কর্মীরা গিয়ে ছেঁড়া তার মেরামত করে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ লাইন সরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁরা লাইন সরানোর জন্য নতুন খুঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু আশপাশের কেউ জমি ব্যবহার করতে দেননি। ফলে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন জানান, আজ দুপুরের দিকে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মনজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।