কারখানা খোলার পর কর্মমুখর গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, নিরাপত্তা জোরদার

কারখানায় কাজে যোগ দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরে পাঁচ দিন পর আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে পোশাক কারখানাগুলো খুলেছে। পুরোদমে চলছে উৎপাদন। এখন কর্মমুখর গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, যেসব কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, সেসব কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি কিছুটা কম।

এদিকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে গাজীপুর মহানগরীর ভোগাড়া, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, জরুনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।

কোনাবাড়ী এম এম নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিক সফিকুল ইসলাম বলেন, কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর শুনেছেন যে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। অনেক শ্রমিকের মধ্যে গ্রেপ্তারের ভয় আছে। হয়তো সেই কারণে অনেকে কাজে যোগ দেননি। এ ছাড়া আর কী কারণ থাকতে পারে?

আরও পড়ুন

শিল্প পুলিশ, কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকেরা জানান, গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনার পর তুসুকাসহ ১৩টি পোশাক তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গত সোমবার থেকে কিছু কিছু করে চালু হতে থাকে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সব কটি কারখানা খোলা হয়েছে। সকাল থেকে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন।

গাজীপুরে শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ২৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮৮ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বহিরাগতদের পাশাপাশি শ্রমিকেরাও আছেন। এ কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। হয়তো আতঙ্ক কমে গেলে তাঁরা কাজে যোগ দিবেন বলে মনে করছেন শ্রমিকনেতারা।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প এলাকায় মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় শ্রমিক জোট আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা আতঙ্কগ্রস্ত। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে মামলায় তাঁরা গ্রেপ্তার হতে পারেন। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘মজুরি বোর্ডের সুপারিশ আমরা দেখেছি। অনেকেই আপত্তিনামা জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে আছি। তিনি শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে একটি সিদ্ধান্ত দেবেন বলে আশা করি।’

আরও পড়ুন

আজ মঙ্গলবার সকালে কোনাবাড়ী, জরুনসহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখো গেছে, দলে দলে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। অধিকাংশ কারখানার সামনে বড় করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে ‘শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ’। তুসুকা কারখানার সামনে বন্ধের নোটিশের পাশে আরেকটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে, ‘তুসুকা গ্রুপের সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, মঙ্গলবার থেকে কারখানার সব সেকশনের কার্যক্রম যথারীতি খোলা থাকবে। সবাইকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে কারখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা হচ্ছে।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, তেলিচালা, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী, জরুন ও ভোগড়া এলাকার কারখানাগুলোতে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

তুসুকা কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কারখানা যথারীতি চালু হয়েছে। পুরোদমে চলছে উৎপাদন। পুলিশদের বলা হয়েছে, শ্রমিকদের যাতে কোনোভাবে হয়রানি না করা হয়। শ্রমিকদের কাজে ফেরানো হয়েছে। ৯০ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন।

কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকার লগোজ অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক বেলায়েত হোসেন বলেন, নতুন করে ঘোষণা দেওয়া বেতনে চলা কষ্টকর হবে। তবু বেড়েছে, এটাই এখন সান্ত্বনা। তবে বেতন ২৩ হাজার টাকা করা হলে ভালো হতো।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অবস অ্যান্ড ইন্টেলিজেনস) ইমরান আহম্মেদ জানান, কারখানা বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক তাঁদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এ কারণে অনেক কারখানায় শ্রমিকের উপস্থিতি কিছুটা কম। কারখানা খোলার খবর পেলে তাঁরা ফিরে এসে কাজে যোগ দেবেন হয়তো। গ্রেপ্তার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অযথা কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করার কোনো সুযোগ নেই।

বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সরকারের মজুরি বোর্ড থেকে বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকেরা ঘোষিত সেই বেতন প্রত্যাখ্যান করে আবার বিক্ষোভ, কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটনায়। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন শ্রমিক মারা যান।

আরও পড়ুন