রওশনের পৃথক সম্মেলন করার ঘোষণায় ‘সতর্ক’ রংপুরের জাপা নেতারা

জাতীয় পার্টি

রওশন এরশাদের পৃথকভাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছেন রংপুরের নেতারা। দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরের কোনো নেতা-কর্মী যেন এই সম্মেলনে না যান, সে ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করেছেন তাঁরা। মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের খোঁজখবরও রাখছেন তাঁরা।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই। এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক টানাপোড়েন সব সময়ই ছিল। তবে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। রওশন এরশাদ ও তাঁর ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) নির্বাচনে অংশ নেননি।

এমন অবস্থায় আগামী ৯ মার্চ নিজের অনুসারী নেতা–কর্মীদের নিয়ে জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন রওশন এরশাদ। গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কাজী ফিরোজ রশীদকে। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সহ–আহ্বায়ক এবং সফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

রংপুরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতারাসহ রংপুরের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী জি এম কাদেরপন্থী হিসেবে পরিচিত। রওশনপন্থীদের কোনো তৎপরতা রংপুরে নেই। তবে রওশন এরশাদের ঘোষিত সম্মেলনে যাতে কেউ যোগ দিতে না যান, সে ব্যাপারে নজর রাখছেন জি এম কাদেরপন্থী নেতারা। এর অংশ হিসেবে নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে সভার কথাও চিন্তা করছেন।

জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ নিয়ে রংপুরের রাজনীতিতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক, তবে আমরা বসে নেই। কেউ যেন (রওশনের ডাকা কাউন্সিলে) যেতে না পারেন, এ জন্য সার্বক্ষণিক মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ২৬টি আসন পেয়েছিল জাপা। এ ছাড়া সারা দেশে ২৬৫টি আসনে প্রার্থী দেয় জাপা। কিন্তু সমঝোতার আসনের মধ্য থেকেই মাত্র ১১টি আসনে জাপা প্রার্থীরা জয়ী হন। নির্বাচনে দলের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগে পরাজিত প্রার্থীদের একাংশ ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেন। নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের কোন্দল চরম আকার ধারণ করায় হতাশ হয়ে পড়েছেন রংপুরের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, রংপুর অঞ্চল জাপার দুর্গ বলে পরিচিত। নির্বাচনে ভরাডুবির পর নেতা-কর্মীরা চিন্তিত হলেও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার বিষয়ে চিন্তা করছিলেন। এমন অবস্থায় রওশনের নেতৃত্বাধীন কাউন্সিল অধিবেশনের তারিখ ঘোষণায় দল দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন। এতে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে তাঁদের মধ্যে নতুন করে হতাশার জন্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর জেলা জাপার এক শীর্ষ নেতা বলেন, রংপুর বিভাগে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা স্থবির হয়েছে পড়েছেন। তাঁরা চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় একটি পক্ষের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণায় দলের নেতা-কর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে। দলের রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জি এম কাদের জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হওয়ার পর রংপুর তিন দফায় ঘুরে গেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রংপুরের নেতারা তাঁর ওপরই আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন।

জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে জাপার কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেছেন, দলে যতই বিরোধ হোক, রংপুর অঞ্চলে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাবে। কে চলে গেলেন, কারা কাউন্সিলের ডাক দিলেন, এটি কোনো মুখ্য বিষয় নয়। এই অঞ্চলে দলের কোনো ভাঙন নেই।

জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সুরের বিষয়টি নিয়ে রংপুরের নাগরিক সমাজে আলোচনা চলছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেন, রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির অবস্থান মূলত রংপুর অঞ্চলে। জাতীয় পার্টির আঞ্চলিক দলের কথাও বলেছেন খোদ দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে নতুন করে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, এ থেকে কাটিয়ে উঠতে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন