মনোহরদীতে তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী গ্রেপ্তার

নিহত মো. শরীফ
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় এক কিশোরীর টিকটক আইডির নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে মো. শরীফ (২১) নামের এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এক স্বজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি সে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক ছাত্রীর টিকটক আইডির নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে গত সোমবার বিকেলে ওই কিশোরের ছুরিকাঘাতে আহত হন মো. শরীফ। তিন দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান। নিহত মো. শরীফ উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নের বাঘবের গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার ওই কিশোরসহ ছয়জনকে আসামি করে নিহত শরীফের বাবার দেওয়া লিখিত অভিযোগটি বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হিসেবে নিয়েছে পুলিশ। মামলায় যে ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চারজনই কিশোর। দুজন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, আরেকজন মাদ্রাসা থেকে ঝরে পড়া ছাত্র। অন্য দুজন হলেন প্রধান আসামি ওই কিশোরের বাবা ও চাচা।

পুলিশ বলছে, ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর থেকেই মামলার আসামিরা এলাকাছাড়া। তাঁদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা অভিযানও চালানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গতকাল তারা জানতে পারে, ওই কিশোর পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া এলাকায় অবস্থান করছে। পরে ওই এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতেই তাকে মনোহরদী থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, শরীফের পেট ও হাতের মোট পাঁচ জায়গায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। এ মামলার প্রধান আসামি ওই কিশোরকে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে গ্রেপ্তারের পর এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আজ সোমবারই তাকে নরসিংদী আদালতে পাঠানো হবে। বাকি পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

নিহত তরুণের স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে মেয়েটির সঙ্গে শরীফের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে শরীফ সৌদি আরবে চলে গেলে মেয়েটি ওই কিশোরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ওই সময় কিশোরের মুঠোফোন থেকে মেয়েটি টিকটক ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাড়ত। শরীফ দেশে ফেরার পর ওই কিশোরকে এড়িয়ে আবার তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় মেয়েটি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই কিশোর তার আইডি থেকে মেয়েটির আপত্তিকর ভিডিও ছাড়তে থাকে। মেয়েটির টিকটক আইডির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও পাসওয়ার্ড ছিল ওই কিশোরের হাতে।

আরও পড়ুন

এ নিয়ে ওই কিশোরের সঙ্গে শরীফের দ্বন্দ্ব হয়। একাধিকবার আপত্তিকর ভিডিও না ছাড়তে নিষেধ করা হলেও ওই কিশোর থামছিল না। একপর্যায়ে শরীফ ও মেয়েটি টিকটক আইডির নিয়ন্ত্রণ ও পাসওয়ার্ড ফেরত চাইলে ওই কিশোর তা দিতে অস্বীকার করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনার দিন দুপুরে ওই কিশোরকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। এ সময় মেয়েটি তাকে পায়ের জুতা খুলে পেটায়। এরপরই ওই কিশোর তার বাড়িতে শরীফকে ডেকে নিয়ে মেয়েটির টিকটক আইডি ফেরত দেয়। পরে মোটরসাইকেলে উঠে ফেরার সময় শরীফের পেটে ও হাতে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে বসে ওই কিশোর। পরে শরীফ ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।