অধ্যাপক তাহের হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাসপাতাল থেকে কারাগারে

কারাগার
প্রতীকী ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের যেকোনো মুহূর্তে ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাঁকে কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে তাঁকে আবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। এ রায়সংক্রান্ত সব আইনগত প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে কোনো বাধা নেই। চলতি মাসেই তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে। এ অবস্থায় বুকে ব্যথার কারণে কারা কর্তৃপক্ষ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

আরও পড়ুন

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে প্রথমে হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁকে হাসপাতালে থাকা প্রিজন সেলে নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে আজ দুপুরে তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক আবদুল জলিল বলেন, চিকিৎসা শেষে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ফেরত আনা হয়েছে। তিনি এখন সুস্থ।

রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়েছে। দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি ৫ জুলাই ডাকযোগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটলে এ মাসের শেষ দিকে ওই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে খুন হন অধ্যাপক এস তাহের। ম্যানহোল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।

আরও পড়ুন

২০০৮ সালের ২২ মে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের আত্মীয় আবদুস সালামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। অভিযোগপত্রভুক্ত অপর দুই আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেন আদালত।

আপিলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি নাজমুল আলম ও আবদুস সালামর সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়েছে। দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি ৫ জুলাই ডাকযোগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। তখন কারা কর্তৃপক্ষ বলছিল, জেল কোড অনুযায়ী এ ধরনের চিঠি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হয়। কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটলে এ মাসের শেষ দিকে ওই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

আরও পড়ুন

১৭ জুলাই জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, আপিল বিভাগ আসামিদের রিভিউ খারিজ করে দিয়েছেন। এ মুহূর্তে এই রিট শোনার সুযোগ নেই।

রিট আবেদন খারিজের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেছিলেন, যখনই ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়, তখনই রায় কার্যকর বিলম্ব করতে তাঁরা এ ধরনের রিট করেন।

আরও পড়ুন