গরিব মানুষ বরই খাবে আর তুমি আঙুর-খেজুর খাবা, তা হবে না: ইনু

জাতীয় যুব জোটের রাজশাহী বিভাগীয় যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। আজ সোমবার রাজশাহী নগরের বাটার মোড় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

আঙুর-আপেলের বদলে ইফতারে বরই দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, ‘গরিব মানুষ বরই খাবে। আর তুমি আঙুর আর খেজুর খাবা, তা হবে না, তা হবে না।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজশাহী বিভাগীয় জাতীয় যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। নগরের বাটার মোড়ে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

হাসানুল হক বলেন, ‘একটু আগে মোবাইলে দেখলাম এক মন্ত্রী বলেছেন, রোজার সময়ে খেজুর আর আঙুর দিয়ে ইফতার করেন না। বরই দিয়ে করেন। আল্লাহ কী বলব, বলেন। আজকে নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষ জর্জরিত। আপনি মানুষের সঙ্গে ঠাট্টামশকরা করছেন।’

আরও পড়ুন

উল্লেখ্য, রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আজ সোমবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘বরই দিয়ে ইফতার করেন না কেন? আঙুর লাগবে কেন, আপেল লাগবে কেন? আমাদের দেশে আর কিছু নাই? পেয়ারা দেন না, প্লেটটা ওইভাবে সাজান।’

মন্ত্রীর তীব্র সমালোচনার পরই হাসানুল হক উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হেসে বলেন, ‘দুঃখে রাগ হলো, বুঝলেন না। তারপর আবার মনে করতে পারেন ইনু সাব ভোটে হারছে, এ জন্য রাগ করতেছে। না ভাই, আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম, তখন মন্ত্রিপরিষদে এভাবে কথা বলেছি আঙুল তুলে। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় সংসদে যা অবস্থা, তা-ই বলেছি। কোনো রাগের ব্যাপার নাই। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে জনগণকে যদি স্বস্তি দিতে না পারেন, কষ্টে রাখেন, তারা যদি হতাশ হয়, সেই সুযোগ বিএনপি-জামায়াত নেবে। তারা সেই সুযোগে টিকে আছে।’

আরও পড়ুন

‘দুর্নীতির হোতা তিন মাথার দানব’ উল্লেখ করে হাসানুল হক বলেন, ‘আমি বহু গবেষণা করে দেখেছি, তিন মাথার দানব এই দুর্নীতির হোতা। অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ আমলা ও অসৎ রাজনীতিক—এই তিন চক্র যে সিন্ডিকেট করেছে, এটাই হচ্ছে তিন মাথার দানব। যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে চান, দানবের তিন মাথা থেঁতলে দিন। মাথা থেঁতলাতে পারলে দুর্নীতি বন্ধ, বাজার ঠান্ডা।’

সংসদ নির্বাচনের পর নিম্ন আয়ের, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের জীবনে স্বস্তি আসেনি উল্লেখ করে হাসানুল হক আরও বলেন, ‘তাদের পেটের জ্বালার যন্ত্রণা বাড়ছে। তেল, নুন, পেঁয়াজ, চিনি, আদা-রসুন, মরিচ—যেটাতেই হাত দেয়, হাত পুড়ে যাচ্ছে। সকালে এক দাম, বিকেলে আরেক দাম। এটা তো অর্থনীতি না। এই গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবনে স্বস্তি আসেনি।’

হাসানুল হক বলেন, ‘মন্ত্রীরা চিৎকার করছেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। কিন্তু দাম কমছে না, বেড়েই চলেছে। তাহলে ব্যর্থ কে? প্রশাসন ব্যর্থ। কেন তারা কথা শুনছে না? এটা কি সিস্টেমের দোষ, নাকি মুক্তবাজার অর্থনীতির দোষ? নাকি যারা দাম বাড়াচ্ছে, তারা সরকারি ছায়ায় বসবাস করে, এ কারণে তাদের গলা টিপে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলার পরও দাম কমে না। অস্বাভাবিক ব্যাপার! এত শক্তি, এত সাহস, এটা কী করে সম্ভব?’

আরও পড়ুন

দায়িত্ব পেলে দুই ঘণ্টার মধ্যে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারবেন দাবি করে হাসানুল হক বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ থেকে একটি ট্রাক ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে হলে ১৪ জায়গায় চাঁদাবাজি। হিসাব করে দেখেছি, ছয় হাজার টাকা। এটা সবার ওপরে পড়ে। ছয় হাজার টাকার চাঁদা বন্ধ করতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। দেন আমাকে ক্ষমতা, আমি দুই ঘণ্টার মধ্যে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেব।’

রাজশাহী মহানগর জাতীয় যুব জোটের সভাপতি শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় যুব জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শরিফুল কবির, জাসদের সহসভাপতি মজিবুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, জাসদ রাজশাহী মহানগরের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ, জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ মৃধা, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান প্রমুখ।