পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানার অসুস্থ ভালুকটি
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে গড়ে ওঠা মিনি চিড়িয়াখানায় পায়ে পচন ধরা ভালুকটির পর্যাপ্ত চিকিৎসা হচ্ছে না। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ভালুকটিকে রেখে গেলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় এটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
আজ সন্ধ্যায় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের একটি দল অসুস্থ ভালুকসহ অন্য ভালুক এবং জব্দ থাকা অন্য প্রাণীগুলোকেও গাজীপুরের সাফারি পার্কে নিয়ে যাবে বলে বন অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক আজ রোববার বিকেল পৌনে চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসুস্থ ভালুকটিকে জব্দ করে মিনি চিড়িয়াখানায় রেখে এলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা হচ্ছে না। প্রাণীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্য আমাদের একটি প্রতিনিধিদল রওনা হয়েছে সেই প্রাণীগুলো নিয়ে আসার জন্য। দুটি ভালুক ছাড়া জব্দ করে চিড়িয়াখানার জিম্মায় রাখা অন্য প্রাণীগুলোও নিয়ে যাওয়া হবে। পরে সেগুলোকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে রাখা হবে। ভালুকটির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’
অসীম মল্লিক জানান, হরিণ, ময়ূরসহ যেসব প্রাণীর লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেগুলোর লাইসেন্সের জন্য সুযোগ দেওয়া হবে ওই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা হবে। তবে প্রাণীগুলোকে রেখে আইনি পদক্ষেপে যাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে জব্দ প্রাণীগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তারপর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৮ এপ্রিল প্রথম আলোর অনলাইনে ‘ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর সেদিন বিকেলে ঢাকার বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালায়। অবৈধভাবে এখানে রাখা ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়। এর মধ্যে অসুস্থ ভালুক, বানরসহ ২১টি প্রাণী বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রেখে যাওয়া হয়। চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে ভালুকটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস ও বন্য প্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা এই অভিযান চালান।
২০১৪ সালের জুনে জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারতেন। মাত্র ৬ লাখ টাকায় ১০ বছরের জন্য মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে চিড়িয়াখানাটি ইজারা দেওয়া হয়েছিল। চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। সাবেক সিটি মেয়র ইকরামুল হক সেখানে প্রাণীর জোগান দিতেন বলে কর্মীরা জানান।
ভালুকটির শরীরে পচন ধরায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল আলমকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসেন। সেদিন বিকেলে ভালুকার পচন ধরা পায়ে হলুদ ছিটানো হয়। ওই সময় অধ্যাপক মো. রফিকুল আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ভালুকের শরীরে সংক্রমণ রয়েছে। সেরে ওঠার সম্ভাবনা খুব কম। তারপরও তাঁরা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ প্রথম আলোকে জানান, দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে এককালীন ৬ লাখ টাকায় ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল চিড়িয়াখানাটি। গত বছরের জুনে ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও ইজারাদারদের কেউ অদ্যাবধি আবেদন বা যোগাযোগ করেনি। একই ইজারাদার পাশে মাসিক ১ হাজার টাকার ভিত্তিতে শিশুপার্কের অনুমোদন নেন। চিড়িয়াখানাটির ভালুকের অসুস্থতার খবরে পুরো বিষয়টি সামনে এসেছে। ইতিমধ্যে বন বিভাগ তাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনও ফাইল প্রস্তুত করছে।