ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যার ঘটনায় মামলা, সংগঠনের তিন নেতাসহ ১৬ জন আসামি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমানছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের আনন্দমিছিলে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমানকে (২২) হত্যার ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিহত তরুণের বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল হোসেন ওরফে খোকা। আসামির তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছেন বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত আশরাফুল সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা আমিনুর রহমানের ছেলে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের পক্ষের কর্মী ছিলেন। আসামি হাসান আল ফারাবীও নির্বাচনে শাহাদাৎ হোসেনের পক্ষে কাজ করেছেন।

আরও পড়ুন

মামলার অন্য আসামিরা হলেন শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাফি আলম (২৮) ও তাঁর বড় ভাই সাগর (৩২), কাউতলীর শাহাদাৎ হোসেন ওরফে সানি (২৮), কলেজপাড়ার অপু (৩০), মামুন (৩৮), মাসুম (৪০), শাহরিয়ার ওরফে লাদেন (২২), রুবেল (২৮), অলি (৩০), রুমান (৩৫), তারেফ (৩০), সৌরভ (৩০), মামুন (২৮), মুরসালিন (২৮)। জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হওয়া হাসান আল ফারাবীসহ অন্য আসামিরা জালাল হোসেনের অনুসারী। কলেজপাড়ার বাসিন্দা জালাল হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আরও পড়ুন

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কলেজপাড়ার বাসা থেকে কলেজে আসা-যাওয়া অবস্থায় জালাল হোসেনের সঙ্গে নিহত আশরাফুলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। জালাল তাঁর অনুগত বাহিনীর মাধ্যমে কলেজপাড়ায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। গত বুধবার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। আশরাফুল ক্রিশ্চিয়ান মিশন প্রাইমারি স্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সারিতে দাঁড়াতে যান। জালাল জোরজবরদস্তি করে ভোট দিতে গিয়ে সারি ভেঙে ধাক্কা দিয়ে আশরাফুলকে বের করে দেন। এর প্রতিবাদ করলে জালালের নেতৃত্বে আসামিরা আশরাফুলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্দেশে রওনা হন আশরাফুল। বিকেল সোয়া ছয়টার দিকে কলেজপাড়ার জামাল মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তায় পৌঁছালে জালালসহ আসামিরা পিস্তল, রামদাসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র নিয়ে আশরাফুল ও তাঁর বন্ধুদের পথরোধ করেন। জালাল তাঁর হাতে থাকা পিস্তল হাসানের হাতে তুলে দিয়ে আশরাফুলকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। হাসান আল ফারাবী পিস্তল দিয়ে আশরাফুলের মাথার বাঁ পাশে গুলি করেন। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসক জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে আশরাফুল মারা যান।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আশরাফুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাতেই সুহিলপুরের মুসলিমপাড়ায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়।