ছাত্রদলের ভাঙচুর ও হুমকির পর ক্যাম্পাসে যাননি রেজিস্ট্রার, প্রশাসন নীরব

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা রেজিস্ট্রারের টেবিলের ওপর থাকা নাশতার কাপ-পিরিচগুলো ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। আজ সকালে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রেজিস্ট্রারের কক্ষেছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ভাঙচুর ও পদ ছাড়তে রেজিস্ট্রারকে হুমকি দেওয়ার ঘটনার পর আজ রোববার ক্যাম্পাসে যাননি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। এ ঘটনার পর প্রশাসনকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যোগাযোগ করলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কুষ্টিয়া শহরে নিজ বাড়িতে আছি। ক্যাম্পাসে যাওয়া হয়নি। তেমন কাজও নেই, তাই যাইনি।’ তিনি বলেন, গতকালের বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তাই কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহকে ফোন করলে ‘মিটিংয়ে আছেন’ জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

এর আগে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে তাঁকে পদ ছাড়তে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাঁরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অর্থ ও হিসাব শাখার বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েও হুমকি এবং দরজা-জানালায় আঘাত করেন বলে অভিযোগ। পরে উপাচার্যের কাছে ৯ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান তাঁর কার্যালয়ে নাশতা করছিলেন। তখন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক শাহেদ আহম্মেদ, সদস্যসচিব মাসুদ রুমী, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজসহ ১০ থেকে ১২ জন নেতা-কর্মী তাঁর কক্ষে যান। তাঁরা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং পরবর্তী দিন থেকে কার্যালয়ে না আসার জন্য হুমকি দেন। পরে তাঁরা টেবিলের ওপর থাকা নাশতার কাপ-পিরিচ ভেঙে চলে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, রেজিস্ট্রার কার্যালয় ছাড়াও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, অর্থ ও হিসাব শাখার কিছু দপ্তরে গিয়ে হুমকি ও দরজা-জানালায় আঘাত করেন। এ ছাড়া তাঁরা রেজিস্ট্রারের সহধর্মিণী অর্থ ও হিসাব শাখার উপহিসাব পরিচালক রুবিনা আক্তারের কার্যালয়ের চেয়ারটি টেবিলের ওপর তুলে রেখে যান। তবে তখন রুবিনা আক্তার কার্যালয়ে ছিলেন না। শাখা ছাত্রদলের সাহেদ আহম্মেদের নেতৃত্বে এসব ভাঙচুর ও হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদের মুঠোফোন নম্বরে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে সদস্যসচিব মাসুদ রুমী ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের গতকাল বলেছিলেন, ‘আমরা রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়েছিলাম। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছি, আওয়ামী দোসর হিসেবে কীভাবে এখনো পদে বহাল থাকেন? আমরা ভাঙচুর করিনি। আমাদের আহ্বায়কসহ সবাই ছিলেন সেখানে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক প্রথম আলোকে বলেছেন, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। সেসব ক্যামেরার ফুটেজ সাংবাদিকেরা চাইলেও সরবরাহ করা হয়নি। কাউকে ফুটেজ দেওয়া হচ্ছে না।

যোগাযোগ করলে প্রক্টর শাহীনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রেজিস্ট্রারের ফোনের পর গতকাল কার্যালয়ে গিয়ে পরিদর্শন করেন। কাপ-পিরিচ ভাঙা দেখেছেন। যেহেতু রেজিস্ট্রার কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তাই কিছু করা হয়নি। উপাচার্যও কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেননি।