যশোরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তারের’ অভিযোগ, চার দিনে গ্রেপ্তার ১২০

যশোর জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। শনিবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

২৭ মে যশোরে বিএনপির জনসমাবেশ ঘিরে নেতা-কর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপি নেতাদের দাবি, গত চার দিনে তাঁদের ১২০ নেতা-কর্মীকে আটক করে আগের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির নেতারা এ অভিযোগ করেন। যশোরের সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলার আট উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ১২০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক, শার্শা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, যশোর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান ও নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম। এ ছাড়া অন্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘যশোরের সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নিরীহ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পুলিশ। গণহারে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ১৬ মে রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ১২০ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। এই সংবাদ সম্মেলনে আসার সময়ও ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ হতে পারে না।’

পুলিশকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির বিপরীতে আরেকটি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা না করে পুলিশ দিয়ে কর্মসূচি দমন করার চেষ্টা চলছে। আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ নাজেহাল। আপনাদেরও বাজারে যেতে হয়। আপনারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছেন। সামনে নির্বাচন, আপনারা নিরপেক্ষ আচরণ করুন।’

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ সাবেরুল হক আরও বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, পুলিশ যতই ধরপাকড় করুক, নেতা-কর্মীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাঁরা যেকোনো মূল্যে সমাবেশে হাজির হবেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যশোর থেকেই কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এ জন্য যশোরের সমাবেশ দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ২৭ মে যশোর টাউন হল ময়দান বা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জনসমাবেশ হবে। দুটি জায়গা পছন্দ করে প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এখনো অনুমতি পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ বন্ধ করে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন ও সদস্য রফিকুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। দলের কোনো নেতা-কর্মীকে হয়রানির জন্য কিছু করা হচ্ছে না। মূলত যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে এবং মামলার আসামি, তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন