পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ‘ঝামেলায়’ গ্রেপ্তার যুব গেমসের পাঁচ খেলোয়াড়ের জামিন

রাজশাহী আদালত চত্বরে ১১ জন খোলোয়াড়ের স্বজনেরা। আজ সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসে অংশগ্রহণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গ্রেপ্তার হওয়া ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ পাঁচ খেলোয়াড়ের জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক এই জামিন দেন।

গতকাল রোববার ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরার পথে ট্রেনে একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ঝামেলা হলে যুব গেমসে অংশ নেওয়া একদল খেলোয়াড়ের নামে ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১১ খেলোয়াড় ও তাঁদের কোচকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রাত আটটার দিকে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলে ছয় খেলোয়াড় ও কোচকে ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন হোসেন তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ খেলোয়াড়কে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ তোলা হলে রাতে তাঁরা আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। তাঁদের আইনজীবী মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত হয়ে যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। আজ আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়। আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের পূর্ণাঙ্গ জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তাঁরা একজন প্রবেশন কর্মকর্তার নজরদারিতেও থাকবেন বলে আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন।

১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৩ জন ছেলে ও ৮ জন মেয়ে। কারাগারে পাঠানো ৬ জন হলেন—আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার ওরফে পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)। অন্য পাঁচজনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাঁদের কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)।

ওই পুলিশ ও তাঁর বউয়ের পা-হাত ধরেছি। বুকে জড়ায়ে মাফ চেয়েছি। কিন্তু তাঁদের একই কথা, মামলা করে ওদের ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেবে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক এক খেলোয়াড়ের মা

আজ সকাল ১০টা থেকে আদালত চত্বরে ১১ জন খোলোয়াড়ের স্বজনেরা অপেক্ষা করছিলেন। তাঁরা অনেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের খেলোয়াড় হিসেবে একটা ক্যারিয়ার রয়েছে। ১৮ মার্চ তাঁদের ভারতে খেলা আছে। মামলা নিষ্পত্তি না হলে তাঁরা খেলতে যেতে পারবেন না। তাঁদের পড়াশোনাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন খেলোয়াড় রিমি খানমের (১৯) মা ফিরোজা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা খেলতে গিয়েছিলেন সবাই হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে। গরিব বলেই তাঁরা খেলতে গেছেন। যাতে খেলে একটা কিছু হতে পারেন। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে রিমি খানম এবার এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর পড়াশোনা আছে। ১৮ মার্চ  ভারতে খেলা আছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই মামলা থাকলে তাঁর মেয়ের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। পড়াশোনাটাও নষ্ট হবে।

রিমি খানম সেনাবাহিনীর হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। সে তিনজনকে হারিয়ে সোনা জিতেছেন উল্লেখ করে ফিরোজা বেগম বলেন, ‘তার মেয়েসহ সবার পুরস্কারের টাকা ও মেডেল একটা ব্যাগে ছিল। সেই ব্যাগ হারিয়ে গেছে। ওরা খোঁজাখুঁজি করছিল। নামার সময় ওই পুলিশের সঙ্গে নাকি ধাক্কা লেগেছে। আমাদের ছেলে আলী আজম সঙ্গে সঙ্গে সরি বলেছে। তারপরও পুলিশ ওর কলার ধরে একটা চড় মেরেছে। তখন তার সঙ্গে আরও ছেলে ছিল। তারাও গেছে। নাকে একটু লাগলেই তো রক্ত বের হয়। সেটাই হয়েছে। এই নিয়ে মামলা করেছে।’

ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমরা এটার মীমাংসা চাই। মামলা লড়তে গেলে আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্যারিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে।’

একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক খেলোয়াড়ের মা বলেন, ‘ওই পুলিশ ও তাঁর বউয়ের পা-হাত ধরেছি। বুকে জড়ায়ে মাফ চেয়েছি। কিন্তু তাঁদের একই কথা, মামলা করে ওদের ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেবে। যাতে আর খেলতে না পারে। যাতে আর পড়তে না পারে।’

আরও পড়ুন

এই খেলোয়াড়েরা জুডো, কুস্তি, কারাতেসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের বাড়ি। মামলায় মো. রমজান (১৯) নামের আরেক খেলোয়াড়কেও আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

গতকাল বিকেলে গোলাম কিবরিয়া (৩০) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা মামলাটি করেন। গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলী খেতুর গ্রামে। তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গতকাল স্ত্রী রাজিয়া সুলতানাকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে তাঁকে মারধর করে খেলোয়াড়দের দলটি। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা-পুলিশ সবাইকে থানায় নিয়ে যায়।

মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলায় তাঁর স্ত্রী দাবি করেন, স্বামীকে মারধরের সময় তাঁর গলার চেইন চুরি করে নেওয়া হয়েছে।