ইজিবাইক চুরির মামলায় যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন ইজিবাইক সমিতির সভাপতি

চুরি
প্রতীকী ছবি

মাগুরার নতুন বাজারে গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় কেনাকাটা করতে যান ইজিবাইকের চালক নাজমুল ইসলাম। রাস্তার পাশে ইজিবাইক রেখে একটু দূরে যান তিনি। এরই মধ্যে তিনি খেয়াল করেন তাঁর ইজিবাইক চালিয়ে কেউ পালিয়ে যাচ্ছেন। যানজট ঠেলে নাজমুলও ছুটতে থাকেন ইজিবাইকে পেছনে। তবে কিছুদূর দৌড়ে হারিয়ে ফেলেন।

মাগুরা সদর উপজেলার খালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল ইসলামের সাতজনের সংসার। পুরো সংসারটাই চলে ওই ইজিবাইক থেকে আসা আয় থেকে। তিন বছর আগে প্রায় দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ইজিবাইকটি কিনেছিলেন নাজমুল। ফলে উপার্জনের একমাত্র বাহন হারিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার এক অভিযানে নাজমুলের ইজিবাইকসহ দুটি ইজিবাইক উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ। এ সময় পুলিশ গ্রেপ্তার করে তিনজনকে। তাঁদের একজনের নাম মোহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে মিল্টন। তিনি জেলা ইজিবাইক মালিক ও চালক সমিতির সভাপতি। এরপর জেলায় ইজিবাইক চুরির বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

সদর থানা–পুলিশ ও মাগুরা জেলা ইজিবাইক মালিক চালক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায়ই ইজিবাইক চুরির অভিযোগ তাঁদের কাছে আসে। তবে সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চুরি যাওয়া ইজিবাইক উদ্ধার হয়, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্ধান মেলে না। বৃহস্পতিবার ইজিবাইক চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা ইজিবাইক মালিক ও চালক সমিতির সভাপতি আটক হওয়ায় সবাই নড়েচড়ে বসেছেন।

ভুক্তভোগী চালক নাজমুল ইসলাম বলেন, ইজিবাইক চুরির পরপরই তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় খোঁজ নিতে থাকেন। শহরের বিভিন্ন সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন তাঁর ইজিবাইকটি নিয়ে ঝিনাইদহের দিকে চলে গেছে সন্দেহভাজন চোর। পরে লোকজন নিয়ে ঝিনাইদহে চলে যান নাজমুল। সেখানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ফিরে আসেন। পরে ঝিনাদহের স্থানীয় কিছু লোকজন নাজমুলকে একটি বাড়ির সন্ধান দেন যেখানে ওই ইজিবাইকটি আছে বলে সন্দেহ করা হয়।

আরও পড়ুন

নাজমুল পুলিশকে বিষয়টি জানান। এরপর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মনিরা বেগম নামের নারীর ভাড়া বাসায় চুরি হওয়া ইজিবাইক ঢুকতে ও বের হতে দেখা যায়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মনিরা বেগম জানান, ওই ইজিবাইক তাঁর ভাই নিয়ে এসেছিল।

ওই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার মাগুরা সদর থানা পুলিশ মাগুরা পৌরসভার আদর্শ পাড়ায় একটি গ্যারেজে অভিযান চালায়। সেখান থেকে নাজমুলের ইজিবাইকসহ চুরি হওয়া দুটি ইজিবাইক জব্দ করে। চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয় তিনজনকে।

আটক ওই তিনজন হচ্ছেন, পৌরসভার আদর্শ পাড়ার বাসিন্দা ও সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাকারিয়া, তাঁর ভাই আবু হাসনাত এবং সদর উপজেলার সংকোচখালী গ্রামের ইবাদত হোসেন। জাকারিয়া ও হাসনাতের বোন হলেন মনিরা বেগম। মনিরার বাসায় চুরি হওয়া ইজিবাইক নিয়ে গিয়েছিল আবু হাসনাত।

মাগুরা শহরের কলেজ রোডে পৌরসভার একটি মার্কেটে জেলা ইজিবাইক মালিক ও চালক সমিতির কার্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

ইজিবাইক চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসনাত ইজিবাইক কেনাবেচার ব্যবসা করেন। তাঁর ইজিবাইকের গ্যারেজ রয়েছে। তাঁর ভাই জাকারিয়াও মাঝেমধ্যে ইজিবাইক নিয়ে মনিরার বাসায় যেতেন। এ কারণে নাজমুলের ধারণা এই চুরির সঙ্গে জাকারিয়াও জড়িত।

থানা–পুলিশ জানিয়েছে, ওই ইজিবাইক চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক তিনজনকে পুরোনো একটি মামলায় আদালতের মাধ্যমে গত শুক্রবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে গতকাল শনিবার জাকারিয়া, হাসনাত, মনিরা ও ইবাদতকে আসামি করে একটি নতুন মামলা করেন ইজিবাইক চালক নাজমুল। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানানো হয়েছে আদালতে।

আজ রোববার দুপুরে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ইজিবাইকটি হারিয়ে গত সাত দিন আমি অচল হয়ে পড়েছি। এটার উপরেই আমার সংসার চলে। ইজিবাইকটি এখন পুলিশের হেফাজতে আছে। সেটা পাওয়ার জন্য এখন আদালতে আছি।’

মাগুরা জেলা ইজিবাইক মালিক ও চালক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌর এলাকায় আড়াই হাজারের বেশি ইজিবাইক চলাচল করে। মালিক ও চালকদের স্বার্থ রক্ষ্যায় ২০১২ সালে জেলা ইজিবাইক মালিক ও চালক সমিতি গঠন করা হয়। বর্তমানে এই সমিতির ৭৭ জন সদস্য রয়েছেন। ২০২২ সালের মে মাসে মোহাম্মদ জাকারিয়া এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রিপন খান বলেন, ‘আমরা যাঁরা এই সংগঠনের দায়িত্বে আছি, তাঁরা দীর্ঘদিন জাকারিয়ার সঙ্গে চলাফেরা করি। আমরা যতদূর জানি, তিনি চুরির সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কারণে তিনি হয়তো ফেঁসে গেছেন। তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসুক। তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন, তবে সংগঠন তাঁর দায় নেবে না।’

নাজমুল ইসলামের করা ইজিবাইক চুরির মামলাটি তদন্ত করছেন সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ইজিবাইক চুরির অভিযোগ মাঝেমধ্যেই আসে। কিন্তু তথ্যপ্রমাণের অভাবে হয়তো অনেক অপরাধী পার পেয়ে যায়। এই কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে সিসি ক্যামেরার কারণে।

আরও পড়ুন