হবিগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে ২ সাংবাদিকসহ আহত অন্তত ৩০

বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আজ রোববার দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে একদল পুলিশকে প্রায় ২০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। পরে আরেক দল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শটগানের গুলি ছুড়ে তাঁদের উদ্ধার করেন।

আজ রোববার দুপুরে শহরের শায়েস্তানগর মোড়ে এ সংঘর্ষ হয়। এতে ২ সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, পুলিশের গুলিতে তাঁদের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত দুই সাংবাদিকের চোখ, মুখ ও বুকে বেশ কিছু গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন করতে আজ দুপুর ১২টার দিকে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের শায়েস্তানগর মোড়ে জড়ো হন। এরপর সেখানে মানববন্ধন শুরু করেন তাঁরা। মানববন্ধনের প্রায় শেষ পর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিতে অগ্রসর হন। এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এরপর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। চলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত।

সংঘর্ষ চলাকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতা–কর্মীরা। আজ রোববার দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ঘিরে ফেলেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা নিজেদের রক্ষা করতে দৌড়ে শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থিত একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েন। নেতা-কর্মীরা সেখানে তাঁদের প্রায় ২০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর থানা ও পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে অবরুদ্ধ পুলিশ দলকে উদ্ধার করতে শটগানের গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় শতাধিক গুলি ছোড়া হয়। এতে পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। পরে ঘটনাস্থলে বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরাও উপস্থিত হন।

আরও পড়ুন

এ দিকে পুলিশের ছোড়া গুলিতে মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি নিরঞ্জন গোস্বামী (৩০) ও দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি আলী হামজা (৩০) গুরুতর আহত হন। হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসক আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, যে দুজন সাংবাদিক আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন, তাঁরা দুজনই গুলিবিদ্ধ। তাঁদের চোখ, মুখ ও বুকে বেশ কয়েকটি গুলি লেগেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকা কিংবা সিলেট যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে পুলিশের অবস্থান। আজ রোববার দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এ ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানববন্ধন থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। তাঁরা পুলিশের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনার সময় সন্দেহজনক একজনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আকস্মিক হামলা করে এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এতে তাঁদের শতাধিক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। পুলিশের ভয়ে অধিকাংশ নেতা-কর্মী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে জেলা সদরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

আরও পড়ুন