দুই চিকিৎসক লাঞ্ছিতের ঘটনার ‘মীমাংসা’, পা ধরে ক্ষমা চাইলেন শ্রমিক নেতা

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি গতকাল শনিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের উপস্থিতিতে মীমাংসা করা হয়েছে। অভিযুক্ত শ্রমিক নেতা এলিম পাহাড় চিকিৎসকদের ও সংসদ সদস্যের পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছেন, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

শরীয়তপুর আন্তজেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি এলিম পাহাড় গতকাল দুপুরে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান ও চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইয়াছিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ওই ঘটনায় শাহরিয়ার বাদী হয়ে সদরের পালং মডেল থানায় বিকেলে লিখিত অভিযোগ করেন। তখন পুলিশ এলিম পাহাড়কে আটক করে। সংসদ সদস্যর মধ্যস্থতায় ঘটনাটি মীমাংসা হওয়ার পর সন্ধ্যায় মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন ওই চিকিৎসক। পরে পুলিশ আটক এলিম পাহাড়কে ছেড়ে দেন।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলিম পাহাড়কে আটক করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকেরা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তখন এলিম পাহাড়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সদর হাসপাতাল সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শরীয়তপুর আন্তজেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি এলিম পাহাড় পৌরসভার বালুচরা এলাকার বাসিন্দা। গতকাল একটি মারামারির ঘটনায় তাঁর ছেলে মাথায় আঘাত পান। তাঁকে নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে আসেন কয়েকজন। খবর পেয়ে সেখানে যান এলিম পাহাড়। জরুরি বিভাগে ওই কিশোরের চিকিৎসা চলছিল। আরও দ্রুত কেন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, এমন কথা বলে চিকিৎসকদের গালমন্দ করতে থাকেন এলিম পাহাড়। তখন সেখানে উপস্থিত চিকিৎসক শাহরিয়ার ইয়াছিন এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তখন শার্টের কলার ধরে এলিম তাঁকে মারধর করেন। এ সময় ওই চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও তছনছ করে ফেলে দেওয়া হয়। এমন ঘটনা শুনে জরুরি বিভাগে ছুটে যান সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান। তখন তাঁকেও ধাক্কা দেওয়া হয়, টানাহেঁচড়া করা হয়।

ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হলে সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ হাসপাতালে যান। ততক্ষণে এলিম পাহাড় ও তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে চিকিৎসকেরা এলিম পাহাড়ের ছেলেকে অন্তবিভাগ ভর্তি করে চিকিৎসা দেন।

ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসক শাহরিয়ার পালং মডেল থানায় এলিম পাহাড়ের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ করেন। পুলিশ এলিম পাহাড়কে আটক করে। খবরটি শুনে এলিমকে ছাড়ানোর জন্য শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন তৎপরতা শুরু করেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি চিকিৎসকদের তাঁর (সংসদ সদস্যর) চৌরঙ্গী এলাকায় কার্যালয়ে ডেকে আনেন। সেখানে আলোচনার পর শাহরিয়ার অভিযোগ তুলে নেওয়ার আবেদন করেন। আবেদন পাওয়ার পর পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেন। সংসদ সদস্যের লোকজন থানা থেকে এলিম পাহাড়কে সেখানে নিয়ে আসেন। তখন এলিম পাহাড় ওই চিকিৎসকদের কাছে ক্ষমা চান।

আরও পড়ুন

বৈঠকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। ১ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ সদস্যর বাসভবনে হামলার শিকার চিকিৎসকসহ কয়েকজন বসে আছেন। সংসদ সদস্য এলিম পাহাড়কে তাঁদের পায়ে ধরে মাফ চাইতে বলছেন। তখন এলিম পাহাড় দুই চিকিৎসকের পায়ে ধরে ক্ষমা চান।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে শ্রমিক নেতা এলিম পাহাড় বলেন, ‘জরুরি বিভাগে আমার ছেলে ১ ঘণ্টার মতো পরে ছিল। কোনো চিকিৎসক এগিয়ে আসেননি। আমি গিয়ে দেখি দুই চিকিৎসক বসে গল্প করছেন। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেছি। পরে বিষয়টি আমাদের মুরব্বি এমপি সাহেব মীমাংসা করে দিয়েছেন।’

সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইয়াছিন বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য অনুরোধ করায় আমি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে বাধ্য হয়েছি। আমার কানের পর্দা ও কণ্ঠনালিতে আঘাত লেগেছে। নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।’

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভাপতি। তিনি অনুরোধ করেছেন ঘটনাটি মীমাংসা করার জন্য। তাই তাঁর উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি ক্ষমা চেয়েছেন। তখন মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে।