সেই হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ, পাওয়া গেছে অনিয়ম

গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তার লাইফ কেয়ার হাসপাতাল বন্ধ করেছেন সিভিল সার্জনছবি: প্রথম আলো

ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার লাইফ কেয়ার হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আক্তার। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে তিনি এ নির্দেশ দেন।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। সেখানে একজন সাধারণ নারীকে অ্যাপ্রন পরা অবস্থায় নার্সের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ সময় সিভিল সার্জন তাঁর যোগ্যতার সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ চাইলে তিনি তা দিতে পারেননি। তবে তিনি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীকে ইনজেকশন দিয়ে থাকেন বলে স্বীকার করেছেন। ওই হাসপাতালে যোগ্যতা ছাড়া স্যাম্পল কালেকশনে একজন যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের অভিযোগ ওঠা রোগীর ফাইলে কোনো অস্ত্রোপচারের নোট ও তথ্য নেই। কেন অপারেশন করা হলো, তার বর্ণনাও পাওয়া যায়নি। এমনকি সেখানে রোগীর ফলোআপ রিপোর্টও নেই। পরিদর্শনে এসব অনিয়ম পাওয়ায় সিভিল সার্জন হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তবে ভেতরে দুজন অস্ত্রোপচারের রোগী থাকায় তাঁদের আগামীকাল বুধবার সকালের মধ্যে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পরে ১০ বেডের হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য জনবলের সপক্ষে সব কাগজপত্র দেখাতে হবে।

আরও পড়ুন

অপর দিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সোমবার সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সভাপতি কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এ ছাড়া একই হাসপাতালের গাইনি কনসালট্যান্ট সদস্যসচিব ও সিভিল সার্জন অফিসের একজন চিকিৎসক এর সদস্য। এই কমিটিকে তদন্ত করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত রোববার গাজীপুরের শ্রীপুরে ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে ইয়াসমিন আক্তার (৩০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। চিকিৎসক ছাড়া নার্সের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেন। এর জেরে সেদিন রাত ১১টায় হাসপাতাল ভাঙচুর করেন ওই প্রসূতির স্বজনেরা।

সার্বিক বিষয়ে লাইফ কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালো চিকিৎসক দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে নাকি ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ে মারা গেছেন রোগী, তা তো বলতে পারব না।’ আগেও এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ ছিল, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাংলাদেশের কোন জায়গায় নেই? ওইটা থাকবেই। পৃথিবী যত দিন থাকবে, অকারেন্স বাড়তেই থাকবে।’

সিভিল সার্জন মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতাল পরিদর্শনে অনিয়ম পেয়েছি। তাই ওই হাসপাতাল বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইচ্ছা ছিল নবজাতককে দেখে আসব। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রসূতির স্বজনদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।’