আনন্দ এমন বেদনায় রূপ নিতে পারে, ধারণা ছিল না শিশুদের

ময়মনসিংহের চর কালিবাড়ী এলাকায় গ্যস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। আজ বুধবার সকালেছবি: প্রথম আলো

রাস্তায় বা পার্কে মাছ কিংবা উড়োজাহাজ আকৃতির রঙিন বেলুন বিক্রি হতে দেখলে শিশুরা খুশি হয়। সেই বেলুন যখন বাড়ির পাশেই তৈরি হতে শুরু করল, তখন ময়মনসিংহ নগরের চর কালিবাড়ী দক্ষিণপাড়া এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের চরের শিশুদের আনন্দের সীমা ছিল না। তাদের আনন্দের উপলক্ষ যে জায়গাটি, সেখানে বিস্ফোরণের মতো বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটতে পারে; সে ধারণা তাদের ছিল না।

প্রায় এক বছর ধরে রঙিন বেলুন ফোলানোর দৃশ্য দেখতে শিশুরা যে বাড়িতে ভিড় করত, আজ বুধবার সে বাড়িতে সুনসান নীরবতা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বেলুন ফোলানোর সময় বিস্ফোরণে পাঁচ শিশুসহ মোট ১১ জন দগ্ধ হয়েছে। দগ্ধদের মধ্যে এক নারীকে গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আজ সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস বেলুনের ব্যবসা করা তারিকুলের ভাতিজা মো. নয়ন বাড়িটির সামনে বসে আছেন। তিনি বলেন, তাঁর চাচা তারিকুল ও চাচি সালমা দুজনই বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন। সালমাকে নেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সালমা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

আরও পড়ুন

বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে ওই এলাকার পাঁচটি শিশু। তারা হলো বেলুনের ব্যবসা করা তারিকুলের মেয়ে মীম (৫), প্রতিবেশী শিশু মানিক (৯), ইয়াসিন (৫), রাহিম (৭) ও সোলায়মান (৫)।

প্রতিবেশীরা বলেন, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। তারিকুলের বাড়ির টিনের বেড়া ভেঙে যায়। প্রতিবেশী নাছিমা আক্তারের বাড়ি ও আহত শিশু মানিকের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে বিস্ফোরিত সিলিন্ডারের বিভিন্ন অংশ। ভেঙে পড়ে পানির ট্যাংক।

স্থানীয় বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি কছিম উদ্দিন বলেন, এমন বিস্ফোরণ এলাকার মানুষ কখনো দেখেনি। সবাই হতবাক হয়ে গেছে। এলাকার পাঁচটি শিশুসহ কয়েকজন আগুনে পুড়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষের খুব মন খারাপ।

দগ্ধ শিশু মানিকের খালা শাহিদা বেগম বলেন, মানিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরেই চলে যেত বেলুন ফোলানো দেখতে। মাঝেমধ্যে একটা করে রঙিন বেলুন নিয়ে আসত। টের পেলে ডেকে ঘরে আনা হতো। কিন্তু সুযোগ পেলে আবারও সে চলে যেত। এভাবে চলছিল প্রায় এক বছর ধরে। মানিকের বাবা নেই, মা আসমা বেগম অসুস্থ।

প্রতিবেশী নাছিমা আক্তার বলেন, তারিকুল প্রায় এক বছর ধরে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন দুপুরের দিকে গ্যাস দিয়ে বেলুন ফোলাতেন। বিকেলে শহরের জয়নুল আবেদিন পার্কে নিয়ে বিক্রি করতেন। প্রতিদিনই বাচ্চারা ভিড় করত। রঙিন বেলুন দেখে বাচ্চারা আবদার করলে মাঝেমধ্যে সেই আবদারও মেটাতেন তারিকুল। কিন্তু এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাঁরা কখনো ভাবতে পারেননি।

আজ সকালে বাড়িটির সামনে ঘোরাঘুরি করছিল কয়েকটি শিশু। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলুন ফোলানোর সময় এমন বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, সেটা তারা জানত না। এমন কোনো ধারণা তাদের ছিল না। কেউ তাদের কোনো দিন সতর্কও করেনি। সঙ্গীদের (যারা দগ্ধ হয়েছে) জন্য তাদের খুব মন খারাপ লাগছে।