কাশেম জিহাদিসহ ৬ আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে, আতঙ্কে পরিবার

লক্ষ্মীপুরে গুলিতে নিহত যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান (বাঁয়ে) ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও প্রধান অভিযুক্ত আবুল কাশেম জিহাদিসহ ছয় আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। হত্যা মামলার এজাহারে থাকা ১০ আসামি গ্রেপ্তার হলেও মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার।

নিহত দুজনের স্বজনদের অভিযোগ, কাশেম জিহাদি বিভিন্ন সময় হোয়াটসঅ্যাপে কল করে তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন, চাঁদা চাচ্ছেন। তিনি গ্রেপ্তার না হওয়ায় তাঁরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, আবুল কাশেম জিহাদি দেশে নেই। ঘটনার পরপরই তিনি চোরাই পথে দেশত্যাগ করেছেন বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকার নাগেরহাট সড়কে গত ২৫ এপ্রিল রাতে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নোমান জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং রাকিব জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

হত্যাকাণ্ডে পরদিন রাতে নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে আবুল কাশেম জিহাদিকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর র‌্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে সন্দেহভাজন ছিলেন ৭ জন।

হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কাশেম জিহাদি মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মুঠোফোনে কথা বলছেন। আমরা অসহায়ের মতো দেখছি।
মাহফুজুর রহমান, মামলার বাদী

মামলার এজাহারে থাকা ১৮ আসামির মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গ্রেপ্তার করা আসামিদের জবানবন্দি ও তদন্তে উঠে আসে, নোমান-রাকিব খুনের সঙ্গে জড়িত কাশেম জিহাদি। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। নোমান-রাকিব হত্যার ২২ দিন পর গত ১৭ মে কাশেম জিহাদিকে বহিষ্কার করে থানা আওয়ামী লীগ।

কাশেম জিহাদি

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সরকারদলীয় দুই নেতা হত্যা মামলাটির অগ্রগতি না হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) পরিবর্তন করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়াকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। গত ২৬ জুন তিনি মামলার নথি বুঝে নিয়েছেন। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা কাশেম জিহাদিসহ ৬ আসামিকে তাঁরা ধরতে পারেননি।

আরও পড়ুন

নিহত নোমান ও রাকিবের স্বজনেরা বলছেন, প্রধান আসামি কাশেম জিহাদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় তাঁরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন তাঁরা আশায় থাকেন, ভাই হত্যার প্রধান আসামি ধরা পড়বে। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও কাশেম জিহাদিসহ ছয়জনকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। অথচ জিহাদি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ড ও কল করে অনবরত হুমকি দিচ্ছেন। চাঁদাও চাইছেন।

চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন মামলার বাদী ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে তৎপর ছিল, সেটি এখন একদম নেই। তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় গত ১০ জুন তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করেন। পরে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেন পুলিশ সুপার। এরপরও মূল হোতা কাশেম জিহাদি গ্রেপ্তার হননি। হতাশা প্রকাশ করে মাহফুজুর বলেন, ‘হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কাশেম জিহাদি মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মুঠোফোনে কথা বলছেন। আমরা অসহায়ের মতো দেখছি।’

আরও পড়ুন

নিহত রাকিবের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বুকে, মাথায় গুলি লেগেছে। ভাইকে বাঁচানোর জন্য চতুর্দিকে চিৎকার দিয়েছি, হাহাকার করেছি। কাশেম জিহাদির ভয়ে একটা মানুষও এগিয়ে আসেনি। ভাইয়ের মৃত্যুযন্ত্রণা, আহাজারি আমি দেখেছি। সহ্য করতে পারিনি।’

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই ক্লু (সূত্র) উদ্‌ঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার, জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব আসামি ধরা পড়েননি, তাঁদের ধরার জন্য অভিযান চলছে। প্রধান আসামি কাশেম জিহাদি দেশে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লক্ষ্মীপুর জেলার সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, কাশেম জিহাদির পেছনে প্রভাবশালী কেউ আছেন। এ কারণেই তিনি আলোচিত জোড়া খুনের আসামি হয়েও চার মাসে ধরা পড়েননি। তবে প্রভাবশালীদেরও বার্তা দিতে হবে—অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন