রাজশাহী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা আবার কর্মবিরতিতে

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা মানববন্ধন করেন। আজ দুপুরে হাসপাতালের সামনে
ছবি : প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ভাঙচুর, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা না নেওয়া এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করায় কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। আজ শনিবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন। আজ বেলা আড়াইটা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন

আজ বেলা দেড়টার দিকে হাসপাতালের সামনে রাস্তায় মানববন্ধন শুরু হয়। মানববন্ধনে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) রাজশাহী জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) রাজশাহী জেলার সভাপতি ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বক্তব্য দেন। এতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সঙ্গে আসা শিক্ষার্থীরা ময়নাতদন্ত করতে দেননি। এটা হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। তাঁরা চান এই মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং এই মৃত্যু কেন, কীভাবে ঘটল তা উদ্‌ঘাটিত হোক। তাঁরা চান হাসপাতালের কর্মনিরাপত্তা। যে কেউ চাইলে মেরে চলে যাবে, এটা যেন না হয়। তাঁরা জেনেছিলেন, এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু আজ জানতে পারছেন, মামলা রেকর্ডই হয়নি। এ মামলা না নেওয়া হলে তাঁরা নিরাপদ নন।

ইমরান হোসেন কর্মবিরতির ঘোষণায় বলেন, আজ দুপুর থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টা আবারও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। এই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি আইনি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাঁরা স্বাচিপ, বিএমএসহ শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। আজ দুপুরে হাসপাতালের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

মানববন্ধনে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে এক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ‘ছাত্র নামে’ হাসপাতাল হামলা করেছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যদি বলি, যারা হত্যাকারী, তারাই তুলে নিয়ে এসে এখানে এই নাশকতা চালিয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসক, নারী চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর হামলা চালিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলতে চাই, এটা প্রমাণিত যে শাহরিয়ারকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর জন্য ডাক্তারদের কোনো নতুন সার্টিফিকেটের দরকার নেই। তাহলে পোস্টমর্টেম না করে লাশ নিয়ে পালিয়ে গেল কেন?’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সেই রাতে কারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছিল? তাদের ভিডিও ফুটেজ বহু জায়গায় আছে। তাদের চিহ্নিত করা হোক।

আরও পড়ুন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ার গত বুধবার রাত আটটার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে রাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাত ১২টার দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সবাই একযোগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন

রাবির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রায় ৪০ মিনিট চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসায় অবহেলায় সহপাঠী মারা যাওয়ায় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ওই সময় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আনসার সদস্যরা তাঁদের মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা হাসপাতালের গাছের টব ভাঙেন।

আরও পড়ুন