বরিশালে হঠাৎ শুভেচ্ছা বিনিময়ে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান

বরিশালে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন কামরুল আহসান। শুক্রবার দুপুরে নগরের গড়িয়ারপাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও বরিশালে গুঞ্জন রয়েছে, এবার স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী হতে যাচ্ছেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান ওরফে রূপণ। তবে এত দিন প্রকাশ্যে কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমে দেখা যায়নি তাঁকে।

শুক্রবার দুপুরে কামরুল আহসান নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের গড়িয়ারপাড় এলাকায় বিকেএসপির সামনের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ ওই এলাকায় যান তিনি। পরে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। নামাজ শেষে আশপাশের দোকান, পথচারী ও বাসাবাড়িতে ঢুকে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন সম্ভাব্য এ প্রার্থী। হঠাৎ তাঁর এই ভোটারদের কাছে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাচনী মাঠে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এর আগে কামরুল আহসান গত বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে। আহসান হাবিব কামাল বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি গত বছর মারা গেছেন।

২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন আহসান হাবিব কামাল।

আজ বিকেলে প্রথম আলোকে কামরুল আহসান বলেন, ‘আমি কাউকে না বলে হঠাৎ ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। কারণ, ওই এলাকার মানুষের কাছে আমার প্রয়াত বাবা একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন। বিশেষ করে বর্ধিত এলাকার আটটি ওয়ার্ডের ভোটাররা তাঁকে বেশি ভালোবাসতেন।’

দলীয় নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন জানিয়ে কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ২৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছি। বাকি পাঁচটি ওয়ার্ডেও আলাপ-আলোচনা চলছে। তাঁরা সবাই বিএনপির নেতা এবং সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলর। এ ছাড়া ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। আগে ঘর ও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিগুলো গোছাচ্ছি। এরপর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হলে একযোগে মাঠে নামব।’

গড়িয়ারপাড় এলাকায় জুমার নামাজ শেষে আশপাশের দোকান, পথচারী ও বাসাবাড়িতে ঢুকে কথা বলেন কামরুল আহসান
ছবি: প্রথম আলো

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির একটি ভোটার গোষ্ঠী রয়েছে। আপাতত মনে হচ্ছে, বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। দলটি মনে করে, বিএনপির একটি বড় অংশের ভোট ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর পক্ষে যাবে। তবে কামরুল আহসান প্রার্থী হওয়ায় সেই সমীকরণ অনেকটা বদলে যেতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত কামরুল আহসান ভোটের মাঠে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন। আমরা যত দূর খবর পাচ্ছি, নগরের ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টি মহিলা কাউন্সিলর পদের সব কটিতে বিএনপির নেতারা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এ জন্য বিএনপির ভোটাররা কাউন্সিলর প্রার্থীদের তাগিদে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। সে ক্ষেত্রে মেয়র পদেও তাঁরা ভোট দেবেন—এতে সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভোটাররা কামরুল আহসানের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। তাঁর বাবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়াসহ পারিবারিক ঐতিহ্য তাঁকে সুবিধা দিতে পারে।’

বরিশাল নগর বিএনপির বর্তমান ও সাবেক অন্তত সাতজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে।

তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, ইসলামী আন্দোলন সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নেই। আর জাতীয় পার্টি সরকারি দলের সঙ্গে সহাবস্থানে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির বিশাল ভোট ব্যাংকের শেষ বিকল্প কী হতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভোটার ও সচেতন মহলে। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বিএনপির অনেক নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হবেন—এটা অনেকটাই নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে কামরুল আহসান তাঁদের আনুকূল্য পাবেন—এটাই স্বাভাবিক।

তবে এ বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বরিশাল নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। আমাদের দাবি, জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনে কে প্রার্থী হলেন, কে হলেন না—সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। দলগতভাবে এমন ভাবনাও আমাদের নেই।’

এদিকে কামরুল আহসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন গুঞ্জন ওঠার পর সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁকে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয়। নোটিশ পেয়ে তিনি ৩ মে দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে হাজিরা দেন।

দুদক কার্যালয় থেকে বের হয়ে ওই দিন দুপুরে সাংবাদিকদের কামরুল আহসান বলেছিলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছি। এরপর দুদক আমার ও আমার পরিবারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায়। আমি মনে করি, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই আমাকে হয়রানি করার জন্য সরকারের ইশারায় পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। সরকার চায় না সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী থাকুক।’

আরও পড়ুন

তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, ইসলামী আন্দোলন সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নেই। আর জাতীয় পার্টি সরকারি দলের সঙ্গে সহাবস্থানে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির বিশাল ভোট ব্যাংকের শেষ বিকল্প কী হতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভোটার ও সচেতন মহলে। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বিএনপির অনেক নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হবেন—এটা অনেকটাই নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে কামরুল আহসান তাঁদের আনুকূল্য পাবেন—এটাই স্বাভাবিক।

তবে এ বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বরিশাল নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। আমাদের দাবি, জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনে কে প্রার্থী হলেন, কে হলেন না—সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। দলগতভাবে এমন ভাবনাও আমাদের নেই।’

এদিকে কামরুল আহসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন গুঞ্জন ওঠার পর সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁকে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয়। নোটিশ পেয়ে তিনি ৩ মে দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে হাজিরা দেন।

দুদক কার্যালয় থেকে বের হয়ে ওই দিন দুপুরে সাংবাদিকদের কামরুল আহসান বলেছিলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছি। এরপর দুদক আমার ও আমার পরিবারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায়। আমি মনে করি, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই আমাকে হয়রানি করার জন্য সরকারের ইশারায় পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। সরকার চায় না সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী থাকুক।’