রাজশাহী বিমানবন্দরে মনোনয়নবঞ্চিত সংসদ সদস্য আয়েনের কান্না

মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। বুধবার দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সামনের সড়কেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ঢাকা থেকে রাজশাহীতে এসে বিমানবন্দরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন। নেতা-কর্মীরাও তাঁর সঙ্গে কাঁদলেন। আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আজ পবা-মোহনপুরের মানুষ তাঁদের মাটির সন্তানকে হারিয়েছেন। তাই বহিরাগত বর্গিরা এসে পবা-মোহনপুরের মাটি লুট করার জন্য অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমি নির্বাচন করব কি করব না, এ ব্যাপারে আমার নেতা-কর্মীরা যে দিকনির্দেশনা দেবেন, আমি সেটাই মেনে চলব।’

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়েন উদ্দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা দুই মেয়াদ এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তাঁকে বাদ দিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আসাদুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার একইভাবে বিমানবন্দরে নেমে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন। ওই দিন আসাদুজ্জামানের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দরের প্রধান ফটকের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। সেখানেই তিনি বক্তব্য দেন। তবে আজ বুধবার আয়েন উদ্দিনের কর্মীদের আর ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

ঢাকা থেকে আয়েন উদ্দিন বিমানবন্দরে আসবেন—এই খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে নেতা-কর্মীরা শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সামনের রাস্তায় ভিড় করতে থাকেন। এ সময় কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের বাইরের ফটক বন্ধ করে দেয়। তখন নেতা-কর্মীরা ফটক ভাঙার চেষ্টা করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আয়েন উদ্দিন বিমানবন্দরের বাইরে বের হয়ে এলে রাস্তায় সমবেত নেতা-কর্মীরা তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আয়েন উদ্দিন নিজেও কাঁদতে থাকেন। একপর্যায়ে সড়ক বিভাজকের ওপরে দাঁড়িয়ে তিনি বক্তব্য দেন। এ সময় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তাঁর পাশে ছিলেন।

অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজ, পবার নওহাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক, মোহনপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইকবাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন, পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক তৌফিক ইসলাম প্রমুখ।

আরও পড়ুন
মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর ঢাকা থেকে আজ রাজশাহী ফেরেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সামনে
ছবি. প্রথম আলো

আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘অন্যান্য দল এবার নির্বাচনে আসবে না। তাই এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বহিষ্কার বলে কোনো কথা নেই। আমি নির্বাচন করব কি করব না সেটি বড় কথা নয়। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনাদের সঙ্গেই থাকব। তবে আমি যদি সেই “সিচুয়েশন” সৃষ্টি করতে পারি, তবেই আমি আপনাদের সামনে এসে দাঁড়াব।’ তিনি বলেন, আরেকটি কথা, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে অনেক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে। এরই মধ্যে বিএনপি ও অন্যান্য দল নির্বাচনে আসতে পারে। যদি তারা নির্বাচনে আসে, তাহলে পবা-মোহনপুর আসনের জন্য এই আয়েন উদ্দিন অপরিহার্য হয়ে পড়বে। সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দেবেন, দল যে নির্দেশনা দেবে, সেটিই তিনি মাথা পেতে নেবেন। সেই দিনের জন্য আপাতত মনোনয়নপত্র তুলবেন।

আরও পড়ুন

আয়েন উদ্দিন একপর্যায়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি পবা-মোহনপুরের মাটির সন্তান। এলাকার মানুষকে কোনো অত্যাচার করি নাই, কষ্ট দিইনি। আমার ভুলত্রুটি হতে পারে। সেটি আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। তারপরও আজ এই পরিস্থিতির শিকার হলাম। আমার কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। এই বিমানবন্দরে এসে আমার সম্পর্কে খারাপ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমার মা–বাবা যখন রোজা রেখে নৌকার ভোট দিতে গেছেন, তখন যাঁদের অনেকের জন্মই হয় নাই, তাঁরাও আজ কটূক্তি করেন। আমি নৌকার টিকিট পাইনি, তারপরও আপনারা আমার কাছেই এসেছেন। এই ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না। আমার শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, থাকব।’ এ সময় তিনি নিজেও কাঁদেন, নেতা-কর্মীরাও কাঁদেন। তিনি কাউকে বিশৃঙ্খলা না করার জন্য নির্দেশ দেন।

বিকেল চারটার দিকে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের পক্ষে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন শেখ মো. শিমুল নামের এক ব্যক্তি।

আরও পড়ুন