ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ, বেশি দামে বিক্রির দাবিতে স্মারকলিপি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার সকাল থেকে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তাঁরা।প্রথম আলো ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে তিন দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ আছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করতে রাজি না থাকায় ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। সেই সঙ্গে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন গরুর মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা।

স্মারকলিপি দিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন সমিতির নেতারা। তবে গরুর মাংস আবার কবে থেকে বিক্রি শুরু হবে, সে বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।

আজ বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার ফারুকী বাজার, আনন্দ বাজার, মেড্ডা বাজার, কাউতলী বাজারসহ অন্যান্য বাজারেই কোনো গরু জবাই হয়নি। গত সোমবার থেকে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ আছে। তবে জেলা শহরের এক মাংস ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আজকেও গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে গরুর মাংস বিক্রি শুরু হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাধারণত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে পৌরসভার আওতাধীন এলাকায় ফারুকী বাজার, আনন্দবাজার (বড় বাজার), মেড্ডা বাজার, কাউতলী বাজার, দক্ষিণ মৌড়াইল বউ বাজার, বর্ডার বাজার, ভাদুঘর বাজারে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস বিক্রি হয়। গত শুক্রবার মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ও সবজির মতো ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এর মধ্যে গরুর মাংসের দামও উল্লেখ আছে। গত রোববার রাতে জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ এবং যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের একটি তালিকা গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করা হয়। তালিকায় খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এমন দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় জেলা মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতি গরুর মাংস বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে সম্মতি দিয়ে জেলা শহরের সব গরুর মাংস ব্যবসায়ী গত সোম ও মঙ্গলবার জেলা শহরের বাজারগুলোতে কোনো গরু জবাই করেননি। আজ বুধবার সকালেও কোনো গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন

গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন তাঁরা। কেনা পড়ে ৭২০ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ৬৬৪ টাকা। এই দামে বিক্রি করলে তাঁদের লোকসান হবে প্রতি কেজিতে ন্যূনতম ৫৫ টাকা।

স্থানীয় কলেজশিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, তাঁর বাসায় মেহমান আসার কথা। এ জন্য গতকাল মঙ্গলবার জেলা শহর বাজারে গরুর মাংস কিনতে যান তিনি। কিন্তু বাজারে গরুর মাংস পাননি। বাধ্য হয়ে সরাইল উপজেলা শহর থেকে ৯৫০ টাকা দরে হাড়বিহীন মাংস কিনেছেন। জেলা শহরের ক্রেতারা মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে মনে হয় জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

মাংস ব্যবসায়ী জাকির মিয়া ও মীর মো. কামাল বলেন, শহরে ১০০ গরুর মাংস ব্যবসায়ী আছেন। কিন্তু তাঁরা লোকসান দিয়ে তো মাংস বিক্রি করতে পারেন না।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির স্মারকলিপি পেয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া যৌক্তিক মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে। সারা দেশে সরকার নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি হচ্ছে। আশপাশে খোঁজ নিয়ে তাঁদেরও একই দামে গরুর মাংস বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন।