হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে ইউএনওসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

আদালত
প্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজের একটি প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদনটি করেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের সদস্য ও সুনামগঞ্জ শহরের নতুন হাছননগর এলাকার বাসিন্দা মো. শওকত আলী।

মামলার আবেদনে শাল্লার ইউএনও মো. আবু তালেব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শাল্লার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল কাইয়ূম, উপজেলার নারকিলা গ্রামের শান্ত কুমার দাশ, দামপুর গ্রামের বকুল আহমেদ ও আনন্দপুর গ্রামের বিপ্লব রায়কে বিবাদী করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খায়রুল কবির মামলার আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানি হয়েছে। তবে মামলা গ্রহণের ব্যাপারে কোনো আদেশ হয়নি।

মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের ভান্ডাবিল হাওরে নতুন বৈশাখী ভাঙা পর্যন্ত ১৪৬ মিটার ডুবন্ত বাঁধের সংস্কার করা হয়। প্রকল্পটির নম্বর ২৭। এতে ব্যয় ধরা হয় ২৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে দুই দফা বিলও পরিশোধ করা হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি নারকিলা গ্রামের শান্ত কুমার দাশ, সদস্যসচিব দামপুর গ্রামের বকুল আহমেদ আর সদস্য আনন্দপুর গ্রামের বিপ্লব রায়। এ ছাড়া হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও তদারকি কাজের নীতিমালা অনুয়ায়ী, উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও মো. আবু তালেব ও সদস্যসচিব পাউবো কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম।

আরও পড়ুন

আবেদনে অভিযোগ হিসেবে বলা হয়, বিবাদীদের যোগসাজশে নীতিমালা অমান্য করে ওই প্রকল্পের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী কমিটির সদস্যদের সবাইকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সদস্য ও হাওর এলাকার বাসিন্দা হতে হবে। কিন্তু ২৭ নম্বর প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি ও সদস্যসচিব উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের বাসিন্দা। প্রকল্পের অধীন হাওরে তাঁদের কারও জমি নেই। তাঁরা কেউই কৃষক নন। এর মধ্যে শান্ত কুমারের বাড়ি হাওর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। সবাই উপজেলা সদরে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরজিতে বাদী আরও উল্লেখ করেন, প্রকল্পটিতে বরাদ্দ প্রায় ২৫ লাখ টাকা হলেও মাত্র ৪ লাখ টাকার মাটি ফেলা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। এতে সরকারের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে পাউবো কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, হাওরে বাঁধের কাজ শেষ। কাজে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী পিআইসি গঠন ও কাজ হয়েছে। ইউএনও মো. আবু তালেব বলেন, পিআইসির সদস্যসচিবকে নিয়ে প্রথমে কথা ওঠায় তাঁকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে নেওয়া হয়। এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের সবারই হাওরে জমি আছে। কমিটি গঠন বা কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। স্থানীয় সাংবাদিকদের দুই পক্ষের বিরোধের কারণে অভিযোগ করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষায় পাউবো ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এবার ১ হাজার ৬৩টি প্রকল্পে ২০৪ কোটি টাকা প্রাক্কলন ধরে ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, জেলার ১২টি উপজেলার ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন। হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

আরও পড়ুন