দিনাজপুরে জগন্নাথের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে ওই বিনোদনকেন্দ্র থেকে এক নারীসহ আট কর্মচারীকে আটক করা হয়। পরে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনামিকা আক্তারের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। নবাবগঞ্জ থানায় করা ওই মামলায় এই আটজনের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার উপপরিদর্শক মোস্তানছির বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, রাতেই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অসম্পূর্ণ নাম-ঠিকানা বলেছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—নবাবগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের সবুজ মিয়া (২৯), কুশদহ গ্রামের রেজওয়ান আহমেদ (১৮), শিবপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম (১৭), খালিপপুর গ্রামের প্রভাষ কিসকু (৩৬), কুশদহ গ্রামের আজিজুল হক (১৭), রহিমাপুরের জাবেদুল ইসলাম (৪৫), খোশলামপুর গ্রামের মানিকুল ইসলাম (৩২) ও উত্তর গোপালপুর গ্রামের সালমা আক্তার (২১)। এর মধ্যে সালমা ছাড়া সবাই ওই বিনোদনকেন্দ্রের কর্মচারী।

আরও পড়ুন

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৭৩ জন শিক্ষার্থী চার দিনের শিক্ষাসফরে গত শনিবার উত্তরাঞ্চলে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. মহিউদ্দিনসহ ১০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাঁরা উঠেছেন জয়পুরহাটের একটি আবাসিক হোটেলে। গতকাল সফরের দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সমীক্ষার কাজ শেষে বিকেলে তাঁরা বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাঁরা বের হয়ে জয়পুরহাটে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিনোদনকেন্দ্রের একটি হর্স রাইডে এক ছাত্রী তাঁর ব্যাগ ফেলে আসেন। পরে আরেক ছাত্রীকে নিয়ে তিনি ব্যাগ আনতে যান। এ সময় ওই রাইডের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী সবুজ মিয়া তাঁদের উত্ত্যক্ত করেন। ওই দুই ছাত্রী বিষয়টি সহপাঠীদের জানালে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে বিনোদনকেন্দ্রের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এই আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার দুপুরে নবাবগঞ্জ থানায়
ছবি: প্রথম আলো

সহকারী প্রক্টর মো. মহিউদ্দিন বলেন, মারধর ঠেকাতে গিয়ে তিনিও হামলার শিকার হন। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। আহত শিক্ষার্থীদের প্রথমে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁদের দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল আলম, প্রান্ত, সাকিব, বিজন বসাক, তালহা, আরাফাত, আল মামুন, ওমর ফারুক, তাওহিদুল, মবিনুর, জিন্নাহ, আশরাফুজ্জামান, মকছেদুল ও বিনয় কুমার।

মারধরের শিকার শিক্ষার্থী বিনয় কুমার বলেন, বিনোদনকেন্দ্রর কর্মচারীরা রড ও চেলা কাঠ দিয়ে তাঁদের উপর্যুপরি আঘাত করেছেন।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়সাল শাফি গতকাল রাতে জানান, আহত দুজনের মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। একজনের মাথায় ১০টি ও আরেকজনের ১৭টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট রবিউল আলম আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। যে দুজন মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন, তাঁদের সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। সবাই আশঙ্কামুক্ত। আজকেই তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।