চুয়াডাঙ্গায় আজ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপদাহের মধ্যে শ্রমিকেরা সবাই রোদে ঘেমে একাকার। আজ দুপুরে সদর উপজেলার সুবদিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় টানা চতুর্থ দিনের মতো আজ শুক্রবার প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। পৌর এলাকার অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কর্মকর্তারা জানান, তখন পর্যন্ত এটিই চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর তিন ঘণ্টা পরই রেকর্ড করা তাপমাত্রা সেটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সন্ধ্যা ছয়টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশে আজকের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে এটি চলতি মৌসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এ নিয়ে টানা ৪ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হলো। গত বছরের ১৯ ও ২০ এপ্রিল পরপর দুই দিন এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল ওই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ২১ মে তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

হাটকালুগঞ্জ প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, আপাতত তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। যেভাবে তাপমাত্রা ধাপে ধাপে বাড়ছে, তাতে গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে জনজীবনে চরম অস্বস্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় করণীয় নিয়ে রোববার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালকের পক্ষে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক তাপপ্রবাহ নিয়ে এক সতর্কবার্তা জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।

এদিকে গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া টানা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মানুষের নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। বিশেষ বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না। শহরের রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। অতিরিক্ত গরমের কারণে হঠাৎ করেই কৃষিশ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলার অন্যতম বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সদর উপজেলার পাঁচমাইল-সুবদিয়া এলাকার মডার্ন সিড কোম্পানির চেয়ারম্যান ইকবাল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তাপমাত্রা ক্রমে বৃদ্ধির কারণে এপ্রিলের শুরু থেকে কৃষিশ্রমিকেরাও তাঁদের মজুরি বাড়িয়ে দেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে চার দিন ধরে বাড়তি টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

সুবদিয়া এলাকার একটি চাতালে ভুট্টা শুকানোর কাজে তিনজনকে ব্যস্ত পাওয়া যায়। প্রচণ্ড রোদের মধ্যেই তাঁরা মাথায় গামছা বেঁধে ভুট্টা শুকাচ্ছিলেন। ভুট্টার মালিক রাজু মিয়া বলেন, ‘কদ্দিন ধইরে য্যারাম করে গরম বাড়চে, তাতে মুনিষ পাওয়াই যাচ্চে না। ভুট্টোগুনু ঘরে তুলার জন্নি অনেক অনুরোদ কইরে কৃষিশ্রমিক চঞ্চল হোসেন ও সাইফুল ইসলামকে ডাইকে আনিচি।’

সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা মাথায় এক ব্যক্তি। আজ দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ যুগীরহুদা গ্রামে দুপুরে তিনজন নির্মাণশ্রমিককে রোদের মধ্যেই বালুর স্তূপ থেকে বস্তায় বালু ভর্তি করে অন্যত্র সরাতে দেখা যায়। তিনজনই রোদে ঘেমে একাকার। গরমে সবারই চোখ লাল হয়ে গেছে। ভান্ডারদহ গ্রাম থেকে আসা এসব শ্রমিক অভিন্ন ভাষায় বলেন, গরমের কারণে কদিন তাঁরা কাজ থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু সংসারের খরচ জোগাতে আবারও কাজে যোগ দিয়েছেন।

সদর উপজেলার ভান্ডারদহ গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলীর তিনটি গরু আছে। তিনি বলেন, ‘গরমের ঠ্যালায় জীবন বাঁচিয়ে রাকাই দায়। তার ওপর গরুগুনু সুস্ত রাকতি গুয়ালি ফ্যান চালাইনো হচ্চে, স্যালাইন খাওয়ানো হচ্চে, গোসুল করাইনো হচ্চে। আওভাও অ্যারাম খারাপ হলি গরু গুনু বাঁচাইনোই মুশকিল হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন

এদিকে গরমের তীব্রতার কারণে ডাব, তরমুজ ও আখের রসের বিক্রি এবং দাম দুটিই বেড়ে গেছে। শহরের কলেজ রোডে কথা হয় রাহিমা খাতুন নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, মাঝারি আকারের একটি তরমুজ এক সপ্তাহ আগেও ২০০ টাকায় পাওয়া যেত। বর্তমানে তা ৩০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় লেবু-শরবত বিক্রির দোকান চালু হলেও ইচ্ছেমতো দাম হাঁকানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখের রস প্রতি গ্লাস আগে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন তা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি ডাব সর্বনিম্ন ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এক জোড়া ডাব ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রচণ্ড দাবদাহের সময় করণীয় বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। গরম নিয়ে চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।