প্রতিবন্ধিতা জয় করে অদম্য তুহিন পেলেন জিপিএ–৪.৬৭

এইচএসসির ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা শেষে শ্রুতিলেখক সাব্বির হোসেনের হাত ধরে পরীক্ষাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. মৌত্তাছিম মিল্লা তুহিন
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত মো. মৌত্তাছিম মিল্লা তুহিনের পুরো শরীরই প্রায় অবশ। একা হাঁটতে পারেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধিতা তাঁকে দমাতে পারেনি। শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

তুহিন শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের মুকসুদপুর গ্রামের মো. আলাল উদ্দিন ও মমতাজ বেগম দম্পতির ছেলে। তাঁর দুটি হাত বাঁকা ও শক্তিহীন। হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারেন না। দুই পা সোজা করে দাঁড়াতে পারেন না। কথাও অস্পষ্ট। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ আর মনের জোরে শ্রুতলেখকের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দেন তিনি। তাঁর পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী তুহিনের এইচএসসি পরীক্ষায় শ্রুতলেখকের কাজটি করেছিল ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন। তুহিন প্রশ্নের উত্তর বলার পর সাব্বির খাতায় উত্তর লিখত।

আজ শুক্রবার দুপুরে তুহিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। পরীক্ষায় পাস করায় তাঁর ভালো লাগছে। ফল আরও ভালো হলে আরও বেশি আনন্দ পেতেন।

তুহিন বলেন, তিনি সমাজের বোঝা হয়ে বাঁচতে চান না। লেখাপড়া শিখে সামর্থ্যবান মানুষের মতো কাজ করে বেঁচে থাকতে চান। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হতে চান। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

অদম্য তুহিন প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক সমস্যার কারণে তিনি একা চলাফেরা করতে পারেন না। চলাফেরা করার জন্য ‘পিস বাইক’ নামের একটি গাড়ি প্রয়োজন। এটি তিন বা চার চাকার হয়ে থাকে, পেট্রলচালিত। দাম প্রায় দুই লাখ টাকা। গাড়িটি সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান কোনো মানুষ তাঁকে উপহার হিসেবে দিলে তিনি খুবই উপকৃত হতেন।

আরও পড়ুন

শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা সত্ত্বেও অদম্য মেধাবী তুহিন পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা হলে ভবিষ্যতে তাঁরা দেশ ও সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘প্রতিবন্ধিতা দমাতে পারেনি তুহিনকে, দিচ্ছেন এইচএসসি, হতে চান আলোকিত মানুষ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।