পেকুয়ায় ঝোড়ো বাতাস বইছে, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছে না মানুষ

ঘূর্ণিঝড়ের খবরে ঘর মেরামত করছেন এক দম্পতি। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমকুল এলাকায়ছবি: এস এম হানিফ

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা! বেড়িবাঁধের ওপর জাল আর ডিঙিনৌকা তুলে রেখেছেন জসিম উদ্দিন (৪৩)। জাল যাতে বাতাসে উড়ে না যায়, নৌকার সঙ্গে বেঁধে রাখছেন। জসিম কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমকূল এলাকার বাসিন্দা। স্ত্রী ও চার মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে আমাদের বসবাস। প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় ৯ নম্বর, ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেয়। আমাদের এখানে কিছু হয় না। এবারও কিছু হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে যাব না। বউ-বাচ্চা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মহাঝামেলা।’

দুপুর ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত মগনামা এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, মগনামা লঞ্চঘাট থেকে দক্ষিণ দিকে গেছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধের কূল ঘেঁষে কয়েক শ বাড়িঘর। পশ্চিমকূল এলাকায় মকসুদ আহমদ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের চারপাশে পলিথিন মুড়িয়ে দিচ্ছেন। মকসুদ আহমদ বলেন, ‘এত বড় বেড়িবাঁধ ভাঙলে পুরো পেকুয়া তলিয়ে যাবে। ঝোড়ো বাতাস থেকে রক্ষা পেতে ঘর মেরামত করছি। অবস্থা আরও পর্যক্ষেণ করি, তারপর না হয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাব।’
গৃহবধূ দিলোয়ারা বেগম (৩৮) বলেন, ‘ঘরই আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র। গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছা করে না। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে তখন স্বামীকে পাহারায় রেখে অন্যরা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাব।’
মগনামা ইউনিয়নের পূর্ব মগনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। বেলা দুইটায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ফটক খোলা। ভেতরে কোনো মানুষ নেই, ফাঁকা।

আশ্রয়কেন্দ্র ফাঁকা পড়ে আছে। আজ দুপুর দুইটায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পূর্ব মগনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

উজানটিয়া ইউনিয়নের ফেরাসিঙ্গা পাড়া এলাকার তাজমিন জান্নাত (৪৭) বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রত গিলে আঁরার গরু ছল চুরি অই যাগই। ইন পারা দিবাল্লাই ঘর ছারি নযাই। গরু ছল লই আশ্রয়কেন্দ্রত যাইলে অনেক হষ্ট হয়।’
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরী বলেন, মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। গ্রাম পুলিশকে দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। মগনামার শরৎঘোনা এলাকার মাত্র তিন শ ফুট বেড়িবাঁধ একটু ঝুঁকিপূর্ণ।

আরও পড়ুন

উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে পানি তিন থেকে চার ফুট বেড়েছে। এতে কয়েক জায়গায় বেড়িবাঁধের কাছাকাছি পানি হয়েছে। দুপুরের পর লোকজন আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘরে যেতে শুরু করেছে। কিছু কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেও যাচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়ন সাগর উপকূলে। এই তিনটি ইউনিয়নে ৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক, গ্রাম পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে সচেতন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে চিড়া, মুড়ি বিতরণের জন্য রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

এদিকে সকাল আটটার পর থেকে মগনামা-কুতুবদিয়া নৌপথে স্টিমার, নৌকা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই নৌপথের অন্তত অর্ধশত নৌযান পেকুয়ার কাটাফাঁড়ি এলাকায় ভোলাখালে নোঙর করে রাখা হয়েছে। স্টিমারমালিক ইমরান খান বলেন, সকাল থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পারাপার বন্ধ রয়েছে। নৌযানগুলো নিরাপদে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
বেলা একটা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়েছে। বেলা তিনটায় বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়েছে। মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী এলাকায় শতাধিক চাষির লবণ ভেসে গেছে। উজানটিয়া এলাকার লবণচাষি নাছির উদ্দিন বলেন, সকাল নয়টার দিকে যখন ৯ নম্বর বিপৎসংকেত দিয়েছে, তখনো পেকুয়ায় প্রখর রোদ। এ কারণে মানুষ ঝড়বৃষ্টি হবে না মনে করেছে। কিন্তু দুপুরের পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঝোড়ো বাতাসে শত শত মণ লবণ তলিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন