দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে, এমনটা যাঁরা ভাবেন, তাঁরা আহাম্মকের স্বর্গে আছেন

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাহজাহান খান শুক্রবার ফরিদপুর নতুন বাস টার্মিনালে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো যায়, কিন্তু তা বন্ধ করা যায় না। সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে, এ কথা যাঁরা মনে করেন, তাঁরা আসলে আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। তবে যদি সড়ক যোগাযোগে দুর্ঘটনা কমানো না যায়, চাঁদাবাজি বন্ধ না করা যায়—তাহলে বিপর্যয় হবে।

আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে ফরিদপুর নতুন বাস টার্মিনালে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে ১১১টি সুপারিশ করেছি। এ সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। দুর্ঘটনা বন্ধ করা যায় না। উন্নত দেশসহ এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হয় না। তবে দুর্ঘটনার দিক থেকে আমরা মধ্যম স্তরের দেশ হিসেবে রয়েছি।’

সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শাজাহান খান বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই সাংবাদিকেরা বলে দেন, বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা (সাংবাদিক) কি গবেষণা করে দেখেছেন যে দুর্ঘটনা কেন ঘটেছে? তিনি চান, সাংবাদিকেরা সত্য কথা তুলে ধরুক। শিবচরে যে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, সেটা নিয়ে সাংবাদিকেরা লিখলেন, ‘বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ কিন্তু পরে দেখা গেল, ওই গাড়ির সামনের চাকা বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং সড়কের বেরিয়ার দুর্বল ছিল। তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই যেন বলা না হয় বেপরোয়া গতি।

সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের প্রতি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলেই ড্রাইভারের ওপর দোষ চাপাবেন না। আমি মানছি, অনেক চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। তবে সব ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটে না। যে ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়, সে ক্ষেত্রে এ মন্তব্য আসলেই ক্ষতিকর এবং তা মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।’

আরও পড়ুন

সংসদ সদস্য চালকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে, শিল্পপতি, এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যানের মতো আপনারাও সম্মানিত ব্যক্তি। অন্যকে সম্মান দেবেন, আপনারাও সম্মান পাবেন। মনে রাখবেন, আমাদের দ্বারা কোনো মানুষ যেন অসম্মানিত না হন।’

শাজাহান খান বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিসহ সব দল মিলে শ্রমিক ফেডারেশন গঠিত। শ্রমিক ফেডারেশন একক কোনো দলের নয়। ফেডারেশনের স্লোগান ‘দল যাঁর যাঁর, শ্রমিক ফেডারেশন এক কাতার’।

আরও পড়ুন

এ অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা উসমান আলী অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন না করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আজ অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন খড়্গ হিসেবে শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। কিন্তু শ্রমিকদের দাবিয়ে রাখার জন্য এই আইন সংসদে নিয়ে আসা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রমিক সুরক্ষা আইন না হবে, ততক্ষণ এই আইন পাস করতে দেওয়া হবে না। সংসদে নতুন করে এই আইন তোলা হলে সেদিন থেকেই গাড়ির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে, একটি গাড়ির চাকাও ঘুরবে না।’

সভায় ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জুবায়ের জাকির সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক, মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মো. নাসির প্রমুখ।

আরও পড়ুন