সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ থেকে বাদ পড়ছেন গরিবেরা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানঘাটা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনাফাইল ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর নির্মাণশ্রমিক আল আমিনসহ চার ব্যক্তি গত ৩১ মার্চ একটি ভটভটিতে করে কাজ থেকে ফিরছিলেন। রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় মহাসড়কে ভটভটিটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। ঘটনাস্থলেই আল আমিন প্রাণ হারান। অন্য তিন যাত্রী গুরুতর আহত হন।

নিহত আল আমিনের পরিবারে তাঁর স্ত্রী ও ১৪ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। গত শনিবার আল আমিনের স্ত্রী আয়েশা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে মৃত্যু হলে যে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, সেটি তাঁরা জানতেন না। পরে জানতে পেরে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তত দিনে আবেদনের সময় পেরিয়ে গেছে।

অসহায়ত্ব প্রকাশ করে আয়েশা বলেন, মেয়ে ছাড়া তাঁর আর কেউ নেই। মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসার চালানোই কঠিন। মেয়ের পরীক্ষা দেওয়া হবে কি না, তা অনিশ্চিত।

বিধিমালা অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি পান তিন লাখ টাকা।
বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর বাসটিতে আগুন দেন স্থানীয়রা।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিমালা অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত প্রত্যেকের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সরকার এর জন্য তহবিলও গঠন করেছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে তা জানতে পারছেন না ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। ফলে আবেদন কম পড়ছে। সরকারি হিসাবে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে পরের ১৫ মাসে যত মানুষ হতাহত হয়েছেন, তার মাত্র ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র বলছে, বড় দুর্ঘটনা, হতাহত বেশি হলে তা সারা দেশে আলোচিত হয়। এসব ঘটনায় বিআরটিএ বা কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অবহিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ছোটখাটো এবং গ্রামগঞ্জে ঘটা দুর্ঘটনার খবর আড়ালে থেকে যায়। আর ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না বলে এই সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বঞ্চিত ব্যক্তিরা মূলত দরিদ্র, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন বা স্বল্পশিক্ষিত এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষ।

আরও পড়ুন

বিআরটিএর হিসাবে, গত বছর জানুয়ারি থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫০১ জন মারা গেছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৪১৫ জন। অর্থাৎ দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন মোট ১৫ হাজার ৯১৬ জন। আইন অনুসারে, নিহত প্রত্যেকের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করার যোগ্য। কিন্তু আলোচ্য ১৫ মাসে ক্ষতিপূরণের আবেদন পড়েছে ১ হাজার ১৬০টি।

ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী জনবল নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। তখন আরও দ্রুত প্রক্রিয়া করা যাবে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও ক্ষতিপূরণ তহবিলের প্রধান নূর মোহাম্মদ মজুমদার
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা। বুধবার সকালে ত্রিশালের বীর রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে
ছবি: সংগৃহীত

বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আবেদন করতে প্রক্রিয়াগত জটিলতাও রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। বিআরটিএর হিসাবে, ১৫ মাসে যত আবেদন পড়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২৬৭টির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সংখ্যাটি মোট আবেদনের মাত্র ২৩ শতাংশ।

সরকার ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তার বিধান যুক্ত করে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত বছরের ৩ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন

বিধিমালা অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি পান তিন লাখ টাকা। আহত কারও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় তিন লাখ টাকা। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে পান এক লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় কার দায়, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও ক্ষতিপূরণ তহবিলের প্রধান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও চান বেশি বেশি আবেদন পড়ুক। সচেতনতা সৃষ্টিতে সারা দেশে বিআরটিএ কার্যালয়গুলো কাজ করছে। ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী জনবল নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। তখন আরও দ্রুত প্রক্রিয়া করা যাবে।

সড়ক আইন অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ পেতে নির্ধারিত ফরমে ঘটনার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়। আবেদন দাখিলের পর ৪০ দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

প্রচার কম মানুষ জানছে না

ময়মনসিংহের সোহরাব খান ঢাকার পূর্বাচলে সড়কের পাশে ফুচকা বিক্রি করতেন। গত ২৪ মার্চ পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের পর ঢাকায় সংসদ ভবনের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

সোহরাবের স্ত্রী মিতু আক্তার এখন স্বামীর ফুচকার দোকান চালান। এক ছেলে ও তিন মেয়ের সংসার। মিতু আক্তারের সঙ্গে গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার বনানীতে বিআরটিএর কার্যালয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। স্বামীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে এসেছিলেন তিনি। মিতু বলেন, দুর্ঘটনায় হতাহতের জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়—এটা তিনি জানতেন না। কিছুদিন আগে পূর্বাচলে তাঁর দোকানের পাশেই একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তা দেখে তিনি স্বামীর মৃত্যুর কথা মনে করে কাঁদছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে জানান, সরকার দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। এরপর প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করে সময় শেষ হওয়ার এক দিন আগে বিআরটিএতে এসেছেন তিনি।

ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হয় ক্ষতিপূরণ তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর, বনানী বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে। সারা দেশে বিআরটিএর কার্যালয় থাকলেও সেখানে আবেদন জমা নেওয়া হয় না। আবেদনের সঙ্গে নিহত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ, মামলা বা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) অনুলিপিসহ ৯ ধরনের তথ্য দিতে হয়। আহত হলে চিকিৎসা ব্যয়ের রসিদসহ ছয় ধরনের তথ্য দিতে হয়।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত শুধু যানবাহনের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই খাতে জমা হয়েছে প্রায় ১৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি টাকার কিছু বেশি ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।

বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র কিংবা খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে এতগুলো নথি জোগাড় করা, প্রতিটি সনদের অনুলিপি সত্যায়িত করা এবং সেগুলো ঢাকায় এসে জমা দেওয়া কঠিন। এ জন্য আবেদনের সংখ্যা কম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেড়তলা গ্রামের কাছে মহাসড়কে ট্রাকের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার দুর্ঘটনায় গত ৯ ডিসেম্বর প্রাণ হারান দুজন। গুরুতর আহত হন আরও একজন। তাঁদের কেউ ক্ষতিপূরণের আবেদন করেননি। ক্ষতিপূরণ যে দেওয়া হয়, তা–ও জানেন না স্বজনেরা।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রুমান মিয়া (২০) মাথায় গুরুতর আঘাত পান। প্রায় দুই মাস ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। তাঁর মা শাহীন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের সংসারে ছেলের চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। তারপরও ছেলে পুরোপুরি সুস্থ হননি। তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কখনোই শোনেননি তিনি।

ক্ষতিপূরণের আবেদন সহজলভ্য করতে সারা দেশে হাসপাতাল, থানা ও বিআরটিএর কার্যালয়গুলোতে ফরম রাখা উচিত। সেখান থেকেই হাসপাতাল বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রাথমিক আবেদনটি তৈরি করা হয়। আর জমা নেওয়ার কাজটি বিআরটিএর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে সম্পন্ন করার সুযোগ দিতে হবে।
বুয়েট ও এআরআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. হাদীউজ্জামান

নিষ্পত্তিতে ধীরগতি

সড়ক আইন অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ পেতে নির্ধারিত ফরমে ঘটনার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়। আবেদন দাখিলের পর ৪০ দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘প্রাপকের হিসাবে প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে টাকা দিতে হবে। এতে দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এখন ক্ষতিপূরণ পেতে আট-নয় মাসের বেশি লেগে যাচ্ছে।

যেমন গত বছর ২২ জুলাই ঝালকাঠিতে বাস খাদে পড়ে ১৭ জন মারা যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রহমতুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মা ও বোন। গত ৩০ এপ্রিল রহমতুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় গত বছর আগস্টের দিকে তিনি ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেন। এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি।

ঢাকায় আবেদন জমা হওয়ার পর নানা টেবিল ঘুরে বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কাছে যায়। তিনি অনুমোদন দেওয়ার পর আবেদনের নথি যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই এলাকায় থাকা বিআরটিএর কার্যালয়ে যায়। এরপর ঢাকার বাইরের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি যাচাই–বাছাই করে। সেখানে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার এবং ওয়ারিশদের ডাকা হয়। ইউএনওর নেতৃত্বে কমিটি চূড়ান্ত ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করে তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসক সেটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠায়। এরপর চেয়ারম্যান সময়-সুযোগ বুঝে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে চেক হস্তান্তর করেন।

বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও ও জেলা প্রশাসকেরা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন। দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের কাজে যুক্ত করার ফলে তাঁদের পক্ষে সময় বের করা কঠিন হয়। সব মিলিয়ে আবেদন জমা থেকে শুরু করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া পর্যন্ত বেশ সময় লেগে যাচ্ছে।

জমা ১৬৯ কোটি টাকা

আইনে ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠনে যেসব খাত থেকে অর্থ পাওয়া সম্ভব, তার তালিকা দেওয়া আছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের দেওয়া অনুদান, মোটরযানের মালিকের কাছ থেকে তোলা চাঁদা, সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে আদায় করা জরিমানার অর্থ, মালিক সমিতি থেকে দেওয়া অনুদান, শ্রমিক সংগঠন বা শ্রমিক ফেডারেশন থেকে দেওয়া অনুদান, অন্য কোনো বৈধ উৎস থেকে পাওয়া অর্থ।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত শুধু যানবাহনের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই খাতে জমা হয়েছে প্রায় ১৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি টাকার কিছু বেশি ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।

বিআরটিএ ও ক্ষতিপূরণ তহবিলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আবেদন কম পড়ার কারণে টাকার জোগান নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। তবে ভুক্তভোগী সবাই আবেদন করলে এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর ৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হলে তহবিলে টান পড়বে। কারণ, যানবাহনের মালিকের কাছ থেকে বার্ষিক যে চাঁদা জমা হচ্ছে, তা বছরে ১৫০ কোটি টাকার বেশি নয়। অন্যদিকে অন্তত ৬০ শতাংশ ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দিতে দরকার বছরে ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

সরকারের কাছে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে এককালীন ১০০ কোটি টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছিল। তবে পাওয়া যায়নি।

সড়ক পরিবহন আইনে জরিমানা আদায় করেন পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সড়ক আইন মেনে এই টাকা পেতে গত বছর ২০ মার্চ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ক্ষতিপূরণের তহবিল পরিচালনাকারী ট্রাস্টি বোর্ড। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো দেনদরবার চলছে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, সংস্থাটির ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। রাস্তায় পুলিশের মামলা ও জেলা পরিষদের ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযানে যে জরিমানা হয়, এর হিসাব বিআরটিএতে নেই।

ফরম ‘সহজলভ্য করা উচিত’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক মো. হাদীউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিপূরণের আবেদন সহজলভ্য করতে সারা দেশে হাসপাতাল, থানা ও বিআরটিএর কার্যালয়গুলোতে ফরম রাখা উচিত। সেখান থেকেই হাসপাতাল বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রাথমিক আবেদনটি তৈরি করা হয়। আর জমা নেওয়ার কাজটি বিআরটিএর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে সম্পন্ন করার সুযোগ দিতে হবে।

হাদীউজ্জামান বলেন, গ্রামগঞ্জে দুর্ঘটনার শিকার মানুষদের অনেকে দরিদ্র ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাঁদের পক্ষে প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাকে স্ব–উদ্যোগী হয়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।