ম্যানহোল থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ের পাশে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আজ শনিবার মানববন্ধন করা হয়েছে। নগরের নিউমার্কেট এলাকায় ওমর ফারুক চৌধুরীর বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ের সামনে সচেতন রাজশাহীবাসীর ব্যানারে এই মানববন্ধন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে এই হত্যাকাণ্ডের দায় ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিতে হবে বলে দাবি করা হয়। পাশাপাশি এই খুনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের একতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ের পশ্চিম দিকে একই সীমানাপ্রাচীরের ভেতর তাঁর একটি দশতলা ভবন রয়েছে। এটির নাম থিম ওমর প্লাজা। এই ভবনের প্রথম থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত শপিং মল। আর সপ্তম থেকে দশম তলা পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্ট। ভবনের ১০ তলার একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিজে বসবাস করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁর ওই কার্যালয়ের ম্যানহোল থেকে গত ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী নয়নাল উদ্দিনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ম্যানহোলের সঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নর্দমার সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে। ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে মানববন্ধনের বক্তারা এই মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
আজ বেলা ১১টা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয় এলাকায় একটি পশু ঢুকলেও অনুমতি প্রয়োজন হয়। সেখানে নয়নাল কীভাবে প্রবেশ করলেন? আর কেনই বা তাঁর মরদেহ ম্যানহোলের ভেতরে পড়ে ছিল? তাই খুব সহজেই বোঝা যায়, এটি স্পষ্ট একটি হত্যাকাণ্ড। এর দায় সংসদ সদস্য এড়াতে পারেন না। কারণ তিনি এই কার্যালয়েই বসেন।
বক্তারা আরও বলেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী নানা সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কলেজশিক্ষক থেকে শুরু করে অনেক সাধারণ মানুষও এই রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু নয়নালের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে ফারুক চৌধুরী নিশ্চুপ কেন? তাঁকে অবশ্যই নয়নালের এমন মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি করা প্রয়োজন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোমিন, রাজশাহী বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুজ্জামান শফিক, রকি কুমার ঘোষ, মাহমুদ হাসান, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন প্রমুখ।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করার ব্যাপারে জানতে চাইলে ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। পুলিশ যেটা সত্য, সেটা উদ্ঘাটন করে বের করুক। আর তা না হলে যারা মানববন্ধন করছে, তাদের কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে তারা পুলিশকে দিক। এসব না করে আমার উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, আমাকে ফাঁসানোর জন্য কেউ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই কাজ করেছে। এখন সেটা করতে না পেরে মানববন্ধন করে আমার মানসম্মানের ক্ষতি করা হচ্ছে।’
নয়নাল উদ্দিনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বোন কুলসুম বেগম অজ্ঞাতনামা আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে পুলিশ মরদেহ উদ্ধারের পর এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। গ্রেপ্তারও করতে পারেনি কাউকে। মরদেহ পড়ে থাকার স্থানগুলোর সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট ছিল বলে সংসদ সদস্য ফারুকের কার্যালয় থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে। অন্য কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে।