নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে, প্রাইভেট পড়িয়ে তিথি পেয়েছে জিপিএ-৫

তিথী তরফদার
ছবি: সংগৃহীত

মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই দিনমজুর মা-বাবা মেয়ে তিথী তরফদারকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে বলেন। কারণ, তার পড়ালেখার খরচ বহনের সামর্থ্য তাঁদের ছিল না। পাত্র দেখে বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক করেন তাঁরা। তখন পরিবারের সবার বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিথী। একপর্যায়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দ্বারস্থ হয়ে নিজের বাল্যবিবাহ আটকে দিতে সক্ষম হয় তিথী। অভিভাবক, শিক্ষক আর স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়, নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালাবে সদ্য নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ওই কিশোরী।

তিথীর বাল্যবিবাহ ঠেকানোর সংগ্রাম বিফলে যায়নি। তিথীর বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামে। নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এবার সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। তিথী প্রমাণ করেছে, লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করা সম্ভব।

মেধাবী এ ছাত্রী জানায়, অভাবের কারণে পরিবার তাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে নিজেই পড়ালেখার খরচের দায়িত্ব নেওয়ায় মা-বাবা আর শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়াননি; বরং পরে তাকে সাহায্য করেছেন। ভবিষ্যতে সে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করার স্বপ্ন দেখে। ভালো ফলে পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন অনেক খুশি। তবে ভবিষ্যতে কীভাবে পড়াশোনার খরচ মেটাবে, তা নিয়ে সে চিন্তিত।

কীভাবে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছে, জিজ্ঞেস করলে তিথী বলে, প্রতিবেশীর দুই সন্তানকে প্রাইভেট পড়ানোর মধ্য দিয়ে তার সংগ্রাম শুরু হয়। একে একে প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিকের আট শিক্ষার্থীর গৃহশিক্ষকের দায়িত্ব নেয়। বই-খাতা আর কলম, পেনসিলও নিজের খরচে কিনেছে। ফাঁকে ফাঁকে গৃহস্থালির কাজে দিনমজুর মাকে সহায়তা করেছে। তবে নিয়মিত স্কুলে যেত তিথী।

আরও পড়ুন

তিথীর বাবা অশোক মণ্ডল বলেন, বসতবাড়িসহ মাত্র আট শতক জায়গা আছে তাঁদের। স্বামী-স্ত্রী দুজনই দিনমজুরের কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালান। অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। তবে শিক্ষকসহ এলাকাবাসীর কথা শুনে তিথীর বিদ্যালয়ে যাওয়ার দাবি মেনে নেন। তবে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে মেয়ে। এসএসসি পাস করলেও সামনের আরও কঠিন দিনের কথা ভেবে তাঁরা শঙ্কিত।

মা লতিফা তরফদার বলেন, ‘স্যারদের সাহায্য আর নিজের চেষ্টায় তিথি এত দূর এসেছে। বিয়ে আটকে দিয়ে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। মেয়ে যেন স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, সে দোয়া করি।’

আরও পড়ুন

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণানন্দ মুখার্জি বলেন, তাঁরা বিদ্যালয় থেকে তিথীকে নানা সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের খরচও তাঁরা দিয়েছেন। তিথী খুবই মেধাবী। সে সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে শ্যামনগর, তথা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে তিথী। সহযোগিতা পেলে সামনের দিনগুলোতে তিথী আরও ভালো করবে।