সংঘর্ষের পর উত্তেজনা অব্যাহত, নবীগঞ্জ শহরে ১৪৪ ধারার সময়সীমা বেড়েছে
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা সদরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ১৪৪ ধারার সময়সীমা আরও বাড়িয়েছে প্রশাসন। আজ বুধবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থা বলবৎ থাকবে। এদিকে দুই দল গ্রামবাসীর উত্তেজনা নিরসনে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও নেতারা বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে ১৪৪ ধারা জারির সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টাও চলছে। যদি সেটি হয়, তাহলে উভয় পক্ষের জন্যই ভালো। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’
আজ নবীগঞ্জ সদর এলাকায় থমথমে অবস্থা দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন খুব একটা বাইরে বের হচ্ছেন না। মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও অমৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কেউ কাউকে নিরাপদ ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ পরিস্থিতিতে আজ দুপুরে উপজেলার আউশকান্দি এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা পেশার প্রতিনিধিরা মীমাংসার জন্য বসেছেন।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি আশায়েদ আলী ও হবিগঞ্জের সময় পত্রিকার প্রকাশক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সেলিম তালুকদারের মধ্যে পেশাগত ও প্রেসক্লাব নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষই ফেসবুকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেখালেখি করছিলেন। আশায়েদ আলীকে ৪ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা সদরের মধ্যবাজারে একটি বিপণিবিতানের সামনে পেয়ে তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী সেলিম তালুকদার এবং তাঁর লোকজন মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ সময় বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা হামলাকারী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে দুই তরুণকে আটক করে পুলিশে দেন। ওই দুই তরুণের বাড়ি তিমিরপুর গ্রামে।
এ ঘটনায় তিমিরপুর গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁদের অভিযোগ, উপজেলার আনমুন গ্রামের লোকজন তাঁদের পক্ষের দুজনকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন। এ নিয়ে দুই–তিন দিন ধরে ওই দুই গ্রামের লোকজন কয়েক দফায় মারামারিতে জড়ান। একপর্যায়ে এ মারামারি এলাকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও অমৎস্যজীবী সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন। আনমুন গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের। এ সূত্র ধরে সর্বশেষ গত সোমবার দুপুরে ঘোষণা দিয়ে আনমুন ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা, বল্লমসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকেন নিজ নিজ এলাকায়। তিমিরপুর গ্রামের পক্ষ নেয় পার্শ্ববর্তী পূর্ব তিমিরপুর, পশ্চিম তিমিরপুর, আলিপুর, চড়গাঁও এবং আনমুন গ্রামের পক্ষ নেয় রাজনগর, গন্ধা, রাজাবাদসহ কয়েকটি গ্রাম।
সোমবার বিকেলে উপজেলা সদরে মুখোমুখি হয় দুই পক্ষ। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক মানুষ আহত হন। গুরুতর আহত হয়ে নিহত হন তিমিরপুর গ্রামের ফারুক তালুকদার। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দোকানপাট, হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ নানা প্রতিষ্ঠান। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ওই রাতেই জারি হয় ১৪৪ ধারা। এ অবস্থা গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত তা যা আজ মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানান ইউএনও।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে আমরা বসেছি। আশা করি, এ বিষয়ে একটা সমাধানে আমরা যেতে পারব।’