সংকটাপন্ন বড় মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় টিটো

গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে টিটো মোল্লার দুই মেয়ের। আজ বৃহস্পতিবার সকালেছবি: প্রথম আলো

দেড় বছর বয়সী ছোট মেয়েটা মারা গেল। মেজ মেয়ের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও আট বছর বয়সী বড় মেয়ে এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তিন সন্তানকে নিয়ে ‘বিষ পান করা’ স্ত্রী শারীরিকভাবে শঙ্কামুক্ত হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। মানুষ দেখলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন।

এমন বিপদে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের লঙ্কারচর গ্রামের টিটো মোল্লা। তাঁর স্ত্রী পলি বেগম মঙ্গলবার বিকেলে তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজেও খেয়েছেন বলে জানিয়েছেন টিটো। এতে ওদিন রাতেই তাঁর দেড় বছর বয়সী মেয়ে মীম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বর্তমানে আড়াই বছর বয়সী মেয়ে আমেনা ও আট বছর বয়সী আফসানার চিকিৎসা চলছে গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সপ্তম তলায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের পাশাপাশি দুটি বেডে পলি খাতুন ও তাঁর মা রাজিয়া বেগম বসে আছেন। একটি বেডে বড় মেয়ে আফসানা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তার হাতে স্যালাইন লাগানো, মুখে অক্সিজেন মাস্ক। মেজ মেয়ে আমেনা পলি বেগমের কোলে।

আরও পড়ুন

মানুষ দেখলেই চিৎকার করে এলোমেলো কথা বলছেন পলি বেগম। মাঝেমধ্যে বলে উঠছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ কিছু সময় পর আফসানা যন্ত্রণায় উঠে বসে পড়ে। তখন হাতে লাগানো স্যালাইনের নল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। বারবার সে বাবার খোঁজ করছে।

টিটো মোল্লা তখন স্ত্রীর জন্য খাবার কিনতে নিচে গেছেন। ফোন পেয়ে দ্রুত ছুটে এসে বড় মেয়েকে কোলে নিয়ে বসেন তিনি। তাঁর চোখেমুখে হতাশার ছাপ। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে চলে গেছে, বড় মেয়ের অবস্থা ভালো না। কী করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আপনাদের দেখে আমার স্ত্রী চিৎকার চেঁচামেচি করছে। সে মানসিক ভারসাম্যহীন পড়েছে।’

শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, মা ও তিন সন্তান অসুস্থ অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওই রাতেই ছোট মেয়ে মারা যায়। মা পলি বেগম ও মেজ মেয়ে আমেনার অবস্থা কিছুটা ভালো। বড় মেয়ে আফসানা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম না করা পর্যন্ত বলা যাবে না শঙ্কামুক্ত কি না।

২০১৪ সালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের খাগড়াবাড়ি গ্রামের পলি বেগমের সঙ্গে টিটো মোল্লার বিয়ে হয়। পলি বেগমের অভিযোগ, চাকরিসূত্রে স্বামী বাইরে থাকায় বিয়ের পর থেকেই তাঁর শাশুড়ি নানাভাবে নির্যাতন করে আসছেন। স্বামীকে বলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজেও খেয়েছেন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনার পর প্রতিবেশীরা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় তাঁদের।