২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শেষ কর্মদিবসেও পৌঁছায়নি কোমলমতিদের বই

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের আংশিক চালান এলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বই আসেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের এম এ বারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরেছবি: প্রথম আলো

এক দিন বাদেই শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষ ২০২৩। সারা দেশের মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও ১ জানুয়ারি বই উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত জেলার চারটি উপজেলার কোথাও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই পৌঁছেনি। সদর, আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই আংশিক পৌঁছালেও জীবননগর উপজেলায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির একটি বইও পাঠায়নি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই খামখেয়ালিপনায় চুয়াডাঙ্গার শিক্ষা–সংশ্লিষ্টরা হতাশার কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো বই না পৌঁছানোয় ১ জানুয়ারি বই দিবসের আয়োজনে এই দুই শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে অনেকেই বিব্রত হচ্ছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী যে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বই হাতে পৌঁছে যাবে। তবে, না পৌঁছালে সমন্বয় করে বিতরণ করা হবে।’

আরও পড়ুন

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য মোট ৩ লাখ ৪১ হাজার ১৯টি পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে চিঠি চালাচালির পর ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শেষ কর্মদিবসে গতকাল বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা এবং রাতে দামুড়হুদা উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বমোট ১ লাখ ৫০ হাজার ১৯৮টি বই এসে পৌঁছায়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নোয়াখালীর চৌমুহনীর অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের ট্রাকে করে এসব বই পৌঁছানো হয়।

গতকাল বিকেল চারটায় সরেজমিন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার এম এ বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত গুদামে দেখা যায়, সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বই বুঝে নিচ্ছেন। তিনি জানান, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির মোট ২২ হাজার ৯১ শিক্ষার্থীর জন্য ৫২ হাজার ১৬৫টি বই পাওয়া গেছে।

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাকী সালাম জানান, গতকাল রাতে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির মোট ১৫ হাজার ৯৩০ শিক্ষার্থীর জন্য ৩৭ হাজার ১২০টি বই পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস থেকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির আংশিক বই পাওয়া গেছে। তবে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই যে কারা দেবে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারেনি। তাঁরা যে কারা, তাও জানতে পারিনি।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ২১ হাজার ৫০১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৬০ হাজার ৯১৩টি বই পাওয়া গেছে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে চতুর্থ শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা চাহিদার অর্ধেক ছাড়া তিনটি শ্রেণিরই উল্লিখিত বই শতভাগ পাওয়া গেছে।

এদিকে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বইয়ের প্রথম চালান এসে পৌঁছায়। কিন্তু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এই তিন শ্রেণির অন্যান্য বই এর আগে সরবরাহ (প্রিভিয়াস ডেলিভারি) করেছে বলে চালানে উল্লেখ করে। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তাদের সতর্কতার কারণে বিষয়টি ধরা পড়ে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জোহা প্রথম আলোকে বলেন, অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের ওই চালানে শিক্ষা কর্মকর্তারা কেউই স্বাক্ষর করেননি। তিনি বলেন, ‘ওই চালান আমরা নিইনি। আমরা বলেছি, পূর্ণাঙ্গ বই আপনারা দেবেন তারপর চালানে স্বাক্ষর করা হবে। এ অবস্থায় সাদা কাগজে লিখিতভাবে বুঝে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করেছেন বাকি বইগুলো পথে আছে, ৩১ তারিখের মধ্যে পৌঁছে যাবে।’