স্লোগান নিয়ে বিতর্কের পর এবার কয়রায় স্লোগান ছাড়াই আওয়ামী লীগের সভা

খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে শোকসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতারা। গতকাল বিকেলে কয়রার বাগালী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো।

খুলনার কয়রায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে কর্মীদের স্লোগানের জেরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির তির্যক কথায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বক্তব্য থামিয়ে দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর গতকাল রোববার আবার তাঁরা এক মঞ্চে হাজির হন। তবে এদিন বক্তব্য চলাকালে কোনো পক্ষই আর স্লোগান দেয়নি।

গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার বাগালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে শোকসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সবার দৃষ্টি ছিল খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান ও কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসিন রেজার দিকে। কয়েক দিন ধরে সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির অনুসারী নেতা–কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরস্পরকে দোষারোপ করে বিভিন্ন কথা লিখলেও গতকাল অনুষ্ঠানে তাঁরা ছিলেন একেবারেই শান্ত।

আরও পড়ুন

এর আগে গত বুধবার বিকেলে কয়রা উপজেলার কলনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের শোক দিবসের আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামানের নাম ধরে স্লোগান দেন তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসিন রেজা তাঁদের স্লোগান থামাতে বললেও তাঁরা থামাননি। পরে অনুসারী নেতা–কর্মীদের সাফাই গেয়ে বক্তব্যে সংসদ সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে গণমানুষের দল। এখানে কর্মীদের উচ্ছ্বাস থাকবে। কর্মীরা স্লোগান দিয়ে এগিয়ে আসবেন। স্লোগান হচ্ছে এই দলের প্রাণ।

ওই সময় কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসিন রেজা দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখানে উসকানি দেবেন না। উসকানিমূলক বক্তব্য দিলে হবে না। আপনি আর দলের বারোটা বাজাবেন না। অনেক করেছেন। আমরা কিন্তু এত দিন কোনো কথা বলিনি। আপনি উসকানি দেবেন না।’

তবে গতকালের আলোচনা সভায় তাঁরা নতুন করে কোনো বিবাদে জড়াননি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহরাব আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রেম কুমার মন্ডল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি, কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলার বাগালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সাত্তার এবং সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ গাজী। সভায় বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়রা-পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন যে-ই পাক, তাঁর পক্ষ নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

সভায় বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসিন রেজা বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বসলে দূরত্ব কমবে। তাই আজ একসঙ্গে বসেছি। নিজেদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি ভুলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করছি।’

সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামানও তাঁর বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিরোধী পক্ষ যাতে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমালোচনা করার সুযোগ না পায়, সে জন্য সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

সভা শেষে কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। নেতা-কর্মীদের সংখ্যাও বেশি। এ কারণে অনেক সময় নিজেদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়। আবার একসঙ্গে বসলে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। আজকের ঐক্যবদ্ধ সভার পর আর কারও কোনো বিভক্তি নেই। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এ কারণে কোনো পক্ষই উসকানিমূলক বক্তব্য কিংবা স্লোগান দেয়নি।’