গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে শিক্ষকদের ‘নির্দেশ’ প্রধান শিক্ষকের

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুরে শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে উৎসাহিত করতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলার চিতলিয়া সমিতিরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ সম্প্রতি তাঁর অফিস কক্ষে বসে এই ‘নির্দেশনা দিয়েছেন’ বলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) যে বই দিয়েছে, তার বাইরে কোনো বই বা গাইড শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সুযোগ নেই। আর সব ধরনের গাইড সরকার নিষিদ্ধ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকেরা কেন গাইড বই কেনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন, তা বুঝি না। এমন অন্যায় কাজের অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাইড বই বা সহায়ক বই নিষিদ্ধ করা হলেও বিভিন্ন প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান স্কুল ও মাদ্রাসায় তাদের বইয়ের তালিকা দিচ্ছে। শিক্ষকেরা যেন শিক্ষার্থীদের বই কেনার জন্য ক্লাসে প্রচারণা চালান, সে বিষয়েও বলা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও স্কুল-কলেজের সামনে বইয়ের দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির গাইড বই ও ব্যাকরণ বইয়ের বিজ্ঞাপনসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ঝোলানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

একটি নির্দিষ্ট প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার জন্য চিতলিয়া সমিতিরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ সম্প্রতি অফিসে বসে শিক্ষকদের নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ–সংক্রান্ত ১০ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে হারুন অর রশিদকে বলতে শোনা যায়, ‘...আমাদের শিক্ষাসফরে যেতে টাকা লাগবে। সমিতির ফান্ড লাগবে। কোনো কোম্পানি টাকা দিতে চায়, কেউ দিতে চায় না। আমরা মিটিংয়ে বসেছিলাম।... (একটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান) কোম্পানি কিছু দিতে চায়।’

প্রধান শিক্ষক ওই প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘তাদের গাইডের দাম কমিয়েছে, যা দাম আছে তার থেকে ১০ শতাংশ কমিশন দেবে। এ কারণে তারা কিছু টাকা দিয়েছে। তবে বেশি নয়। ওদের গ্রামারটা পড়াতে হবে। সিলেবাসে যা থাকে, থাকুক। শিক্ষার্থীদের বলতে হবে তোমরা এ গ্রামার ক্রয় করবা। আমরা স্কুলে না পড়ালেও তারা যেন বাড়িতে পড়ে। গাইড ভালো। আপনার ক্লাসে বলে দেবেন যাতে শিক্ষার্থীরা সবাই ক্রয় করে। যেহেতু কিছু টাকা দিয়েছে, তাই সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। টাকা সমিতিকে দিয়েছে। এ টাকার মালিক আমরা সবাই। সমহারে পাব।’

আরও পড়ুন

গাইড বই কেনার নির্দেশনা দেওয়ার ভিডিওর বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কোম্পানির বই কেনার বিষয়ে তিনি কাউকে নির্দেশনা দেননি। এগুলো তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র।

সম্প্রতি বিদ্যালয়সহ সদর উপজেলার পাঁচটি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই প্রকাশনী সংস্থা একটি বইয়ের তালিকা শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। স্থানীয় সব বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে এমন লেখা রয়েছে ওই তালিকায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিতলিয়া সমিতিরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলে, শিক্ষকেরা পাঠদানের সময় ওই বইয়ের তালিকা দিয়েছেন। সবাইকে ওই বই কেনার জন্য বলেছেন। ওই শিক্ষার্থী বলেন, তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার মা বাড়ির হাঁস-মুরগি বিক্রি করে ওই তালিকা অনুযায়ী তাকে বই কিনে দিয়েছেন।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক সমিতির সঙ্গে কোনো প্রকাশনীর আর্থিক লেনদেন নেই। শিক্ষক সমিতি এসব কাজও করে না। কোনো শিক্ষক এমন বলে থাকলে, তা তার নিজের কথা। নিজ দায়িত্বেই এমন বলেছেন।

ওই প্রকাশনী সংস্থার আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বই বিক্রির জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে থাকি। তারা বিভিন্ন স্কুলে বইয়ের তালিকা দিতে পারে।’ ওই প্রকাশনী সংস্থার শরীয়তপুরের পরিবেশক অলিউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বইয়ের একটি তালিকা সব স্কুলে পাঠিয়েছি। তা গ্রহণ করা না–করা ওই স্কুলের বিষয়। শিক্ষক সমিতিকে ওভাবে কোনো টাকা দিই না। তবে তাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সম্মেলন ও কোথাও ভ্রমণে গেলে সে খরচ দিয়ে থাকি।’