সংবাদ সম্মেলন করতে পারেননি রুবেলের মেয়ে, চাইলেন বাবা-চাচার মুক্তি

কারাগারে থাকা ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের মেয়ে যাওয়াতা আফনান সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। শনিবার সকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় কারাগারে থাকা ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের মেয়ে যাওয়াতা আফনান ওরফে রাদিয়া তাঁর বাবা এবং চাচা ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকতের মুক্তি দাবি করেছেন। আজ শনিবার সাংবাদিকদের দেওয়া লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

আজ বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল যাওয়াতা আফনানের। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ ওই সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে। এরপর বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এসে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন যাওয়াতা আফনান। এ সময় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঢুকে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্য পৌঁছে দেন যাওয়াতা আফনান।

আরও পড়ুন

কারাগারে থাকা বরকত ও রুবেল ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁদের বিরুদ্ধে করা দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের মামলাকে রূপকথার সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন যাওয়াতা আফনান। তিনি বলেন, ‘এ মামলায় পুনঃ তদন্তের আদেশে আমার দাবি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হবে আমার বাবা ও চাচা।’

সংবাদ সম্মেলন করতে না পেরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেন এসআই দেলোয়ার। এ সময় সাংবাদিকেরা নারী পুলিশ ছাড়া এভাবে তাঁকে আটকানোর প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আবারও বাদানুবাদ হয় তাঁর।

এরপর ক্ষুব্ধ সাংবাদিকেরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, প্রেসক্লাব তো সাংবাদিকদের বাড়ির মতো। সেখানে পুলিশ কেনো তাঁদের বাধা দেবে? এরপর তিনি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিলকে কল করে এসআই দেলোয়ারকে পুলিশ লাইনসে ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন

লিখিত বক্তব্যে যাওয়াতা আফনান বলেন, মামলায় জব্দ করা জমির দলিল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স সংযুক্ত না থাকায় অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার ৮০০ বিঘা জমি অতিরিক্ত দেখিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। মানি লন্ডারিং মামলা তথ্যনির্ভর। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জেলার ৩০ নেতা–কর্মীর নাম বলানো হয়েছে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নেওয়া এই জবানবন্দি রিট্রাইড করা হয়েছে, যা আদালত আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করেছেন। যে জবানবন্দি নিয়ে এত আলোচনা, তাতে অর্থ পাচারসংক্রান্ত কোনো কিছুই নেই। লেখা আছে, ঠিকাদারি কাজ নেওয়ার জন্য জেলার ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে চাঁদা দিতে হতো।

লিখিত বক্তব্যে যাওয়াতা আফনান আরও বলেন, ‘আমার চাচা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পৌর আওয়ামী লীগের উদোগে করোনার প্রথম ধাপে ১০ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চালসহ অন্য সামগ্রী বিতরণ করা হতো। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেই চাল জব্দ দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে মামলা। টানা ২৫ দিন পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমার চাচা গায়ে আগুন দিলে তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দেওয়া হয়। অথচ কী কারণে একজন ব্যক্তি গায়ে আগুন দিলেন, তার কোনো তদন্ত হলো না।’

বাবা ও চাচাকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে যাওয়াতা আফনান বলেন, ‘সময় ও পরিস্থিতির কারণে তাঁদের (বরকত ও রুবেল) কাজের মধ্যে অনেক ভুলত্রুটি ছিল। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সব কাজ করতে পারেননি। আপনি আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিন। অর্থ পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। যতগুলো মামলা দেওয়া হয়েছে, সব মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমরা চক্রান্তের শিকার।’

বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে ২০২০ সালের ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী-২০১৫-এর ৪(২) ধারায় এ মামলা করা হয়। ওই মামলা তদন্ত করে গত বছরের ৩ মার্চ আদালতে বরকত, রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আসামি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেল।