রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়রানিমূলক, প্রত্যাহারের দাবি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছ থেকে ‘অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ নিচ্ছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম। দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকার জন্য গত বছর তাঁকে এই পুরস্কার দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা হয়রানিমূলক উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) চট্টগ্রাম শাখা। আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান। চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে এ পরিষদ গঠিত।

বিবৃতিতে বলা হয়, মামলাটিতে অভিযোগের সপক্ষে কোনো উপাদান না থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হয়রানি করা হচ্ছে।

মামলা প্রত্যাহার করে রোজিনা ইসলামের ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, ২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কক্ষে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে রোজিনা ইসলামের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বহাল থেকে এখনো সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

বিবৃতিদাতারা হলেন সাংবাদিক জাহিদুল করিম, চিকিৎসক খুরশিদ জামিল, আইনজীবী এস এম বদরুল আনোয়ার, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, সাংবাদিক মো. শাহনেওয়াজ, বেলায়েত হোসেন ঢালী, সারোয়ার আলম, প্রকৌশলী সেলিম মো. জানে আলম, অধ্যাপক নছরুল কাদের, চিকিৎসক তমিজ উদ্দিন, আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, চিকিৎসক আবু জাফর, চিকিৎসক আবদুল মান্নান, আইনজীবী মকবুল কাদের চৌধুরী, সাংবাদিক ইসকান্দর আলী চৌধুরী, চিকিৎসক কামরুন্নাহার দস্তগীর, আইনজীবী এস ইউ এম নুরুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, নারীনেত্রী আরজু সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০২১ সালে এই পুরস্কার পান রোজিনা ইসলাম
ছবি: ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের টুইট থেকে নেওয়া

২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। একই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। তাঁকে শত বছরের পুরোনো ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’–এ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর কারাগারে পাঠানো হয়। এক সপ্তাহের মাথায় ২৩ মে জামিনে মুক্তি পান রোজিনা ইসলাম। এর পর থেকে তিনি আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন তাঁর পাসপোর্ট, মুঠোফোন ও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড (পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতিপত্র) আটকে রাখা হয়।

আরও পড়ুন

গত বছরের জুলাইয়ে মামলা থেকে রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি এ মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী ওই প্রতিবেদনে নারাজি দেন। আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও মামলার প্রতিবাদে দেশ-বিদেশে কর্মসূচি পালিত হয়। বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি সংস্থা প্রতিবাদ জানায়। রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য খাত ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অপরাধসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন করেছেন।

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম ‘সেরা অদম্য সাহসী’ হিসেবে ২০২১ সালে ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি গত বছরের ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২২ সালের ‘অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ পান।