সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে ‘নালিশ’
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে নিয়ে ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ’ বক্তব্য দেওয়ায় ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন-সদরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ এবং শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী যে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে জেলা আওয়ামী লীগ বিস্মিত ও মর্মাহত। সংগত কারণে জেলা আওয়ামী লীগ এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায়।
বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াকের সঞ্চালনে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়। সভায় নিক্সন চৌধুরীর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ ও কেন্দ্রীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অংশ নেওয়া জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শ্যামল ব্যানার্জি নিক্সন চৌধুরীর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রস্তাব ওঠালে সভায় তা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নিক্সনের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (নিক্সন) এসব কথা বলেছেন, সেটা প্রমাণ না করে জেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। তিনিও (নিক্সন) যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার সঙ্গে আলাপ করা যেত। ফরিদপুরের রাজনীতিতে কেউ যদি আবার মোশাররফ হতে চায়, আমরা বৃহত্তর ফরিদপুরের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এটা হতে দেওয়ার বিপক্ষে। তবে আমরা আলোচনা করতে রাজি। তাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে। সঠিক তথ্য জেনে এটা করা উচিত ছিল।’
নিক্সনের অনুসারী ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোবাহান মুন্সী বলেন, ‘এমপি সাহেব জেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে না। তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটি নিতে পারে। অন্য কেউ এ ব্যাপারে ভূমিকা নিতে পারবে বলে আমি মনে করি না।’
১৬ মার্চ ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ বাজারে আয়োজিত একটি সভায় ওই তিন নেতাকে নিয়ে বক্তব্য দেন নিক্সন চৌধুরী। ওই বক্তব্যে তিনি কাজী জাফরউল্লাহর উদ্দেশে বলেন, ‘সাবধান হইয়া যান। নিক্সন চৌধুরী কী এলাকার মানুষ জানে। আপনি দুইবার বঙ্গবন্ধুর নৌকারে মাটির তলে ডুবাইছেন।’
ওই বক্তব্যে নিক্সন চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াককে ‘ফেনসিডিলখোর’ ও জামাল হোসেন মিয়াকে ‘সুইপার ও বটতলার উকিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ বক্তব্যের প্রতিবাদে ১৮ ও ১৯ মার্চ ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়।