পদ হারালেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পেটানো ছাত্রলীগ নেতা
নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দিতে সোহেল মিয়া (৪০) নামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটানো ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাবু নামের সেই ছাত্রলীগ নেতাকে আসামি করে মামলাটি করেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সোহেল মিয়ার মা রেজিয়া বেগম। এ ছাড়া তাঁকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মাধবদী ছাত্রলীগ।
গত শুক্রবার সকাল আটটার দিকে শীলমান্দি ইউনিয়নের নতুনবাজার এলাকার মসজিদসংলগ্ন স্থানে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই প্রথম আলোয় ‘বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে পেটানোর অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাবু (২৫) সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক এবং পাঁচদোনা ইউনিয়নের চরমাধবদী এলাকার মোখলেছুর রহমানের ছেলে। অন্যদিকে আহত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সোহেল মিয়া একই এলাকার মৃত সাইদ মিয়ার ছেলে।
এই ঘটনায় গতকাল রোববার বিকেলে মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম হাফিজুর রহমান সৈকত ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মোস্তাফিজুর রহমানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী ও অমানবিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচদোনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদ থেকে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাবুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাঁচদোনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম হাফিজুর রহমান সৈকত বলেন, কোনো অপরাধীর দায় ছাত্রলীগ নেবে না। ছাত্রলীগের পদ নিয়ে কেউ অপরাজনীতি করবে, তা সম্ভব হবে না। তিনি অমানবিক কাজ করেছেন, তাই সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সোহেল মিয়ার মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমি আমার পরিবার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। কখন না জানি আবার হামলা চালায়। সবাই সাহস দিচ্ছে, থানায় মামলা করেছি। তার বিচার চাই, সাংবাদিকেরা পাশে থাকলে বিচার পাব। তাকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদেরও বিচার চাই। ছেলেকে চিকিৎসা করানোর মতো টাকাও আমার কাছে নেই।’
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আহত সোহেলের মা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে আমরা মামলা নিয়েছি। আসামিকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। তিনি এখন পলাতক, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
এজাহারের বরাত দিয়ে আহত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চরমাধবদীর স্থানীয় বাজারের জাকির হোসেনের মুদিদোকানে যান সোহেল মিয়া। এ সময় প্রতিবেশী মোখলেছুর রহমান দোকানটিতে বিস্কুট খাচ্ছিলেন। সোহেল মিয়া তাঁর কাছে বিস্কুট খেতে চাইলে মোখলেছুর রহমান ধমক দেন। রেগে গিয়ে সোহেল থুতু দেন ও তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। উপস্থিত লোকজন বুঝিয়ে-সুজিয়ে উত্তেজিত মোখলেছুর রহমানকে শান্ত করেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মোখলেছুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রাতে একদল কর্মী নিয়ে সোহেলের বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলেন।
সমাধানের আশায় পরদিন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সোহেলের মামা বাবুল মোল্লা ক্ষমা চাইতে ওই বাড়িতে গেলে তাঁকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরদিন সকাল আটটায় পার্শ্ববর্তী শীলমান্দি ইউনিয়নের নতুনবাজার এলাকায় সোহেলকে একা পেয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় একটি লোহার পাইপ সংগ্রহ করে তাঁর হাতে-পায়ে, সারা শরীরে পেটান তিনি। আশপাশের লোকজন বহু চেষ্টায়ও তাঁকে থামাতে পারেননি। একপর্যায়ে সোহেল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাবুর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাবা মোখলেছুর রহমান এর আগে দুইবার স্ট্রোক করেছেন। বিস্কুট না দেওয়ায় সোহেল আমার বাবাকে থাপ্পড় মারে, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এর আগে এলাকার বহু লোককে সে মেরেছে। আমি প্রতিবন্ধী সোহেলের গায়ে হাত তুলিনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই মাথায় সমস্যা সোহেল মিয়ার। তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা রেজিয়া বেগম ফুফাতো ভাই বাতেন মিয়ার দেওয়া ২ শতাংশ জমিতে ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সোহেলের ছোট ভাই ইমরান মিয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। সোহেল মানুষের কাছে এটা-সেটা চেয়ে বেড়ান। তাঁদের চারটি বাড়ি পরই ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি।