ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পোড়ানো জুলাইকে চ্যালেঞ্জ: সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পোড়ানো জুলাইকে চ্যালেঞ্জ করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের করা কাজ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আজ শনিবার বেলা দুইটার দিকে সিলেট সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী ও সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের উপস্থিতিতে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, তিনি মৌলভীবাজারে ফাগুয়া উৎসব এবং সিলেটে আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু ঢাকায় জরুরি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন।
ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পোড়ানোর সঙ্গে ফ্যাসিবাদের দোসররা জড়িত মন্তব্য করে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসর এ অর্থে বলছি, যারা চায় না এই ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব র্যালিতে থাকুক। নানা রকম মতামত থাকতে পারে। যখন এটা পুড়িয়ে দিতে যায়, তখন বুঝতে হবে এটার পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। সে শক্তির ব্যাপারে সরকার স্পষ্ট একটা অবস্থান নিয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুতই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা দেশবাসীকে আরও বেশি এসব উৎসবে যোগ দিয়ে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এবার সবাই শুধু বাঙালি না; বাঙালি এবং অন্যান্য যত জাতিগোষ্ঠী আছে আমরা এক হয়ে উৎসব করতে চেয়েছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। এটা হয়তো অনেকেরই ভালো লাগবে না, বা ভালো লাগছে না। এটার উত্তর হচ্ছে, আমরা সবাই আরও বেশি করে বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় এবং চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবগুলোতে যোগ দেব। আমাদের ঐক্য দিয়েই আমরা তাদের পরাজিত করব।’
যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা বাধা দিতে চাচ্ছে মন্তব্য করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এটাতে বোঝা যাচ্ছে, এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা চায় না আমরা যে উৎসবমুখর বাংলাদেশ তৈরি করতে চেয়েছি এবং যে ঐক্যের ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ তৈরি করতে চাচ্ছি, এটাকে তারা একধরনের বাধা দিতে চায়। কিন্তু তাদের শক্তি এত কম যে এর শাস্তি তাদের ভোগ করতে হবে। এটার মাধ্যমে তারা সারা দেশের মানুষের সম্মিলিত যে শক্তি, সে শক্তির সামনে দাঁড়াতে পারবে না। এটা চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে বোঝা যাবে। এবার এখনই বোঝা যাচ্ছে পানছড়িতে যে ফুল বিজু উৎসব হচ্ছে, তারপর আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোতে যে অংশগ্রহণ হচ্ছে, সেখানে ফ্যাসিস্টদের যে মুখাবয়ব নিয়ে তারা মিছিল করেছে, সেটা দেখলেই বোঝা যাবে, থামিয়ে রাখা যাবে না। আমি মনে করি না তাদের এত শক্তি আছে। সব মানুষের সম্মিলিত শক্তির সামনে তারা দাঁড়াতে পারবে বলে বিশ্বাস করি না।’
নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য যে বাহিনী আছে, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী—সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। আমরা মনে করি না যে নিরাপত্তার কোনো বড় ঝুঁকি আছে। তবে হ্যাঁ, ঘটনা তো ঘটেছে। ঘটনা যারাই ঘটিয়েছে চারুকলাতে, তারা হয়তো আগুন দিয়েছে একজন বা দুজন। এর পেছনে তো আরও মানুষ আছে, পরিকল্পনা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই আইনের আওতায় আসবে এবং তাদের প্রত্যেকেরই এটার জন্য বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু এটা মনে করি না যে আমাদের দেশজুড়ে যে উৎসবের আবহ বইছে, এটাতে কোনো বাধা দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি না।’
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত শক্তির সামনে এই সব ঠুনকো দুষ্কৃতকারীদের আসলে কিছু করার ক্ষমতা নেই। জাতীয়ভাবে এবার সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে উৎসব করা হচ্ছে। চৈত্রসংক্রান্তির ছুটি দেওয়া হয়েছে। পাহাড় ও সমতলে আমাদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব কিন্তু চৈত্রসংক্রান্তি। শুধু ছুটির ব্যাপার না, উৎসবের আয়োজনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয় সব সময়, এবার সেই শোভাযাত্রায় ২৮টি জাতিগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করছে। এটা একটা ইউনিক ব্যাপার এবং এটা আমাদের ঐক্যের ও সম্প্রীতির বাংলাদেশের দিকে আগানোর জন্য করা হচ্ছে। উৎসবের দিকেও দেখেন, শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় উৎসবের সংখ্যা এবং স্কেল দুটোই বেশি এবং মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততাও বেশি। ব্যাপক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব করছি, এটাই বোধ হয় এবারের উৎসবের বড় দিক।’